মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১ আশ্বিন ১৪৩০

শিরোনাম: তামিমকে ছাড়াই বিশ্বকাপ দল!    নাগোরনো-কারাবাখে জ্বালানি ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহত ২০    রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ৪৩    শপথ নিলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান    খেলাধুলা সুস্থ সমাজ গঠনের অন্যতম অনুষঙ্গ: প্রধানমন্ত্রী    ভোটের দিন সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারে নতুন নির্দেশনা দিলো ইসি    বিএনপিকে ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কাদেরের   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ফাস্ট ফুডের দোকানে থেকে জিয়াউর রহমান এখন বিসিএস ক্যাডার
উলিপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৯:২২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

এক সময় ছিল না বই খাতা, জুটতো না আহার। ভাঙা ঘরে গরু-ছাগলে সঙ্গে রাত কাটতে হয়েছে। অভাব অনটনের সংসারে ঠিকমতো খেতেও পারতো না। তবে অদম্য ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া করে নিজেকে স্বাবলম্বী করাসহ বা-মায়ের দুঃখ ঘোচানোর। সেই ইচ্ছা শক্তি আজ সাফল্যেও চুড়ান্তে পৌঁছে দিয়েছে জিয়াউর রহমানকে। 

জিয়াউর রহমান কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের বাকারায় মধুপুর দালালীপাড়া গ্রামের ছকিয়ত আলী ও জেলেখা বেগমের ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।
জিয়াউর রহমানের বাবা ছকিয়ত আলী হত দরিদ্র কৃষক। ৬ শতক বসতভিটা ছাড়া আর কোনো জমি নেই। ছকিয়ত আলী শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় ঠিকমতো কাজ করতে পারতেন না। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। অভাবের সংসার হওয়ায় পরিবারে সব সময় ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত। পড়াশোনার কোন পরিবেশ ছিল না। পড়ার টেবিল বলতে বাঁশের চাটাই। এভাবে পড়াশোনা করে ২০১২ সালে নতুন অনন্তপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় এ প্লাস পান তিনি।

জিয়াউর রহমান জানান, আলিমে পড়াশোনা হবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। বই কেনার টাকা জোগাড় করতে ঢাকায় যাই।  সেখানে একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে কাজ করি। কিছু টাকা জমিয়ে বাড়ি ফিরে আসি, কিন্তু বই কেনা হয় না।

ছোট বোনের বিয়ের জন্য সেসব টাকা শেষ হয়ে যায়। আবার মুন্সীগঞ্জের আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে যাই। কিছুদিন কাজ করে টাকা নিয়ে আসি। এরপর কিছু পুরনো বই কিনে পড়া শুরু করি। পড়াশোনার ফাঁকে অন্যের জমিতে কাজ করে সংসারে সহযোগিতা করতে হয়। ২০১৪ সালে আলিম পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.৬৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। তবে স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো, কিন্তু ভর্তি প্রস্তুতির কোচিং করার টাকা ছিল না। তাই ঢাকায় গিয়ে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি নিই। সারাদিন ওষুধ কোম্পানির কাজ করে রাতে মেসে ফিরে পড়ার তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। তার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেই, কিন্তু উত্তীর্ণ হইনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মিরপুর বাঙলা কলেজে সুযোগ পাই।



জিয়াউর রহমান আরো বলেন, ‘মিরপুর বাঙলা কলেজে সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারিনি। পরের বছর কোচিং করার চিন্তা করি। কিন্তু চলার মতো হাতে টাকা নেই। তাই টাকার জন্য একটি সিকিউরিটি গার্ড কোম্পানিতে গার্ডের চাকরি নিই। পাশাপাশি ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হই। চাকরি-কোচিং একসঙ্গে চলে। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস! সেবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।

তারপর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পান। ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। শুরু হয় নতুন এক সংগ্রাম, নতুন স্বপ্ন। কিভাবে পড়াশোনার খরচ আসবে তার নিশ্চয়তা নেই। থাকা, খাওয়া ও সামান্য কিছু হাতখরচের টাকার জন্য খ-কালীন কাজ করেন। প্রথম বর্ষের পরীক্ষার আগে মেসে ওঠেন। একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দুই বছর বৃত্তি পান। এ ছাড়া টিউশনি, কোচিংয়ে ক্লাস নিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেন। সেখান থেকে কিছু টাকা প্রতি মাসে বাড়িতে দিতে হতো। সারা জীবন অভাব-অনটন আর পারিবারিক অশান্তিতে জীবন কেটেছে। তাই ‘যেভাবেই হোক, ভালো চাকরি পেতে হবে এই বাসনা নিয়ে চাকরির জন্য পড়াশোনা করেন। প্রথম বর্ষের রেজাল্ট ভালো না হওয়ায় ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা তেমন গুরুত্ব দেননি। 

অনার্সে জিয়াউর রহমানের ফলাফল আসে সিজিপিএ-৩.৪১। অ্যাপিয়ার্ড দিয়ে ৪১তম বিসিএসে আবেদন করেন। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন, তাই প্রস্তুতি ভালোই ছিল। কিন্তু করোনায় সব কিছু বন্ধ হওয়ায় ইনকামও বন্ধ হয়ে যায়। আবার আর্থিক সংকটে পড়েন। এ সময় বন্ধুদের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে চলেন। তখন টাকার জন্য টাইলস মিস্ত্রি ও রাজমিস্ত্রির সঙ্গে কাজ করেন।

প্রিলিমিনারির সূচি প্রকাশের পর আবার রাজশাহীতে চলে আসেন। হল না খোলায় কাছের এক বন্ধুর মেসে উঠে দুই মাস প্রস্তুতি নেন। পরে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। লিখিত পরীক্ষার জন্য কোচিং করার ইচ্ছা থাকলেও টাকার কারণে করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি বিসিএস কোচিংয়ে সামান্য টাকায় শুধু মডেল টেস্ট বা নমুনা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ভর্তি হন। প্রস্তুতি ভালোই ছিল, কিন্তু অসুস্থতা এবং মাস্টার্স পরীক্ষা থাকায় লিখিত পরীক্ষা মোটামুটি হলেও যেভাবে চেয়েছিলেন, ততটা ভালো হয়নি। অবশেষে লিখিত পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। তারপর ভাইভা প্রস্তুতির জন্য বুঝে উঠতে পারছিলেন না কোন বই পড়বেন, কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন। তারপর সিনিয়রদের পরামর্শে ‘ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি বইটি সংগ্রহ করেন। শুধু এই একটি বই পড়েই তিনি ভাইভা দিয়েছেন। এরমধ্যে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি হয়। বিসিএসের রেজাল্ট যেদিন দেয় সেদিন শিক্ষা ক্যাডারে নিজের রোলটি দেখে জিয়াউরের চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
http://dailyvorerpata.com/ad/apon.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]