প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩, ১০:০১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আধুনিক সভ্যতার এযুগে মানুষের উন্নত জীবনযাপনের পাশাপাশি নৌকায় জীবন ধারণের ব্যতিক্রম চিত্রও দৃশ্যমান রয়েছে। সংসার সংগ্রামে নদী ও খালের বিভিন্ন স্থানে ভাসমান নৌকায় কাটছে তাদের জীবন। কোন জমি ভিটামাটি না থাকায় বেদে সম্প্রদায়ের এসব পরিবারগুলো যুগযুগ ধরে নৌকায় বসবাস করে আসছেন। ঈদের আনন্দ উৎসবের কোন রকম ছোঁয়া পরেনি এসব পরিবারের মধ্যে। ছোট্র নৌকায় বৃষ্টিভেজা ঈদ আনন্দহীন সময় কাটিয়েছেন বেদে পরিবারের সদস্যরা।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার গোয়ালীমান্দ্রা-আলমপুর- শ্রীনগরের খালের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাসমান নৌকায় প্রায় শতাধিক বেদে পরিবারকে দিনানিপাত করতে দেখা যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রীনগর-গোয়ালীমান্দ্রা খালের উপজেলার সদর এলাকার ঝুমুর সিনেমা হল রোড সংলগ্ন, দেউলভোগ ও আলপুর বাজার সংলগ্ন ও পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষা ভাগ্যকুল এলাকার বিভিন্ন শাখা খালে নোঙ্গর করা নৌকায় বেদে পরিবারগুলো বসবাস করছেন। শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ কোন মৌলিক চাহিদাই যেন ঠিকমত জুটছেনা এদের ভাগ্যে। ছোট্র নৌকায় পরিবারের শিশু, বৃদ্ধসহ নারী-পুরুষ সদস্যরা গাদাগাদি করে থাকছেন। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই রান্নাবান্না ও সাংসারিক যাবতীয় কাজকর্ম এই নৌকায়। কোন কোন পরিবারের ২/৩টি করে কোষা নৌকা একত্রে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। গেল ঈদেও উৎসবের আমেজ ছিলনা এসব বেদে পরিবারে। জানা গেছে, বেদে পরিবারের পুরুষদের এখন প্রধান পেশা হচ্ছে মাছ শিকার করা। মাছ বিক্রির টাকায় কোন রকমে সংসার চালছে। এ সম্প্রদায়ের নারীরা এক সময় নৌকায় ফেরি করে গ্রামে কিংবা বিভিন্ন মেলা উৎসবে চুরি-ফিতা, তৈজসপত্র বিক্রি করতেন। এখন বিভিন্ন কারণেই মেলা-উৎসবে আগের মত এসব সামগ্রী আর বিকিকিনি হচ্ছেনা।
এই অঞ্চলের খালগুলো নানা করণেই দখল আর ভরাটের কারণে নব্যতা হারাচ্ছে। তার পরেও জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার তাগিদে বেদে পরিবারের সদস্যরা থেমে নেই। বেদে সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা এখন বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। বিশেষ করে পুরুষরা দিনমজুর, শ্রমিক ও ইজিবাইক চালিয়ে অর্থ উপার্যন করছেন।
অপরদিকে নারীরা গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় হেঁটে তৈজসপত্র বিক্রি করছেন। কেউ কেউ আবার নৌকায় বসে হস্তশিল্পের নানা সামগ্রী তৈরীর কাজও করছেন। রোদ, বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে পরিবারের সদস্যরা সুখে দুঃখে ভাসমান নৌকাতেই দিন কাটাচ্ছেন। বেদে পরিবারের সদস্যরা বলেন, পূর্ব পুরুষদের অনুসরণ করাই তাদের পরিবারগত সভাব। তাদের জন্ম-মৃত্যু হচ্ছে এই নৌকাতেই। মাছ বিক্রির টাকায় কোনরকমে চলছে তাদের সংসার। অনেকেই অন্য কাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন বলেন তারা।