
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়া (২০) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ওই ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা ঘাতক বাসটি আটক করলেও পালিয়ে যান চালক ও হেলপার। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে বাসচালক মো. লিটন (৩৮) ও হেলপার মো. আবুল খায়েরকে (২২) গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানার পুলিশ।
বাসচালক লিটন ভোলা সদরের ইলিশার মো. কালু মিয়ার ছেলে ও হেলপার আবুল খায়ের একই জেলার সদরের বিদুরিয়া গ্রামের হাসেম ঘরামীর ছেলে। দুজনই বাড্ডার আনন্দনগরের সার্জেন্ট টাওয়ারের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আ. আহাদ বলেন, ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি বুঝে বাস রেখে পালিয়ে যান তারা। পরে মিরপুরের শাহ আলী থানাধীন প্রিয়াংকা হাউজিং থেকে আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রাতেই আত্মগোপনের উদ্দেশে রাজধানী ছেড়ে ভোলা যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা।
ভাটারা থানা পুলিশ কর্তৃক ঘাতক ভিক্টর বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সোমবার দুপুরে বনানীর ডিসি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আ. আহাদ বলেন, গতকাল (রোববার) দুপুর পৌনে ১টার দিকে নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাদিয়া মোটরসাইকেলযোগে উত্তরা থেকে আসছিলেন। মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো-ল-৬০-২৬৮২) চালাচ্ছিলেন তার বন্ধু একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র মেহেদী হাসান।
প্রগতি সরণির যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৩১৯০) দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে আরোহী নাদিয়া রাস্তায় পড়ে যায়। মাথার ওপর দিয়ে বাসের চাকা যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই নাদিয়ার মৃত্যু হয়।
এ সময় ভাটারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘাতক বাসটি আটক করে। নাদিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে নাদিয়ার বাবার কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
নিহত নাদিয়া পটুয়াখালী গলাচিপা পূর্ব নেটার জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে। রাজধানীর উত্তরার ৯নং সেক্টর, রোড নং-৯/১ বাসায় থাকতেন নাদিয়া।
ডিসি আহাদ বলেন, নাদিয়ার মৃত্যুর পর ভাটারা থানায় মামলা করেন তার বাবা জাহাঙ্গীর। অন্যদিকে নাদিয়ার সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতক বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেয়।
ঘাতক চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারে ভাটারা থানার ওসির নেতৃত্বে একাধিক টিম অভিযান শুরু করে। রাতেই সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত বাসের চালক ও হেলপারকে শনাক্ত করা হয়। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মিরপুরের শাহ আলী থানাধীন প্রিয়াংকা হাউজিং থেকে চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, রাজধানীর সড়কে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক হিসেবে বাসই বেশি দেখা যায়। ভিক্টর পরিবহনের বাসচাপায় এর আগেও শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় বাসে বাসে রেষারেষি বন্ধ হয়েছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। ফলে মারা গেল নিরীহ শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে ডিসি আ. আহাদ বলেন, গুলশান ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগসহ ডিএমপি সড়ক পরিবহন আইন মানার জন্য সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যারা সাধারণ যাত্রী ও পথচারী, সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে সবাইকে আইন নিয়ম-কানুন মানতে হবে, জানতে হবে। তদন্তে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমরা আশ্বস্ত করেছিলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি ধরব, আমরা সেটা সক্ষম হয়েছি।
ডিসি আহাদ বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। রিমান্ড পেলে জিজ্ঞাসাবাদে সব কিছু জানতে চাওয়া হবে।