বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোনাম: হত্যাচেষ্টা মামলায় বিপাকে পরীমনি    বনানীতে ভিসা সেন্টার চালু করলো চীন    রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ১৯    সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সঙ্গীতশিল্পীসহ নিহত ২    ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ১৭    নিরাপত্তা ইস্যুতে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না : ইসি    প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির কারণে দুবাই ও শারজাহতে ঢাকা থেকে ৯টি ফ্লাইট বাতিল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
গুরুদাসপুরে শ্রমিকের হাটে তরুণ আর শিশু শ্রমিকদের কদর বেশী
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২, ৯:২৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

নাটোরের গুরুদাসপুরে শ্রমিকের হাটজুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। তবে এ হাটে কোনো পণ্য বিক্রি হয় না, শুধু বিক্রি হয় মানুষের শ্রম। স্বল্প মজুরিতে কাজ বেশি তাই তরুণ শিশু শ্রমিকদের কদর ও বেশি। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের নয়াবাজারসহ অনেকগুলো শ্রমিকের ভ্রাম্যমাণ হাট গড়ে উঠেছে। নয়াবাজার শ্রমিকের বিভিন্ন হাট ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পরে। এই শ্রমিকের হাটের বয়স প্রায় বিশ বছর। 

কার্তিক অগ্রাহায়নে চলনবিল জুড়েই শুরু হয় আমন ধান কাটা আর রসুন রোপণের কাজ তাই কৃষক ও শ্রমিকরা নিজেদের প্রয়োজনেই ছুটে আসেন শ্রমিকের হাটে। সেখানে মালিকরা শ্রমিকদের দরদাম শেষে  চুক্তিবদ্ধ  করে নিয়ে যান নিজেদের কাজে। মালিকরা  ইচ্ছে মতো ক্রয় করতে পারেন শ্রমিক। কারন হাজারো শ্রমিক দেশের নানা প্রান্ত থেকে শ্রম বিক্রি করতে আসেন চলনবিল অধ্যুসিত নয়াবাজারসহ ওই হাটগুলোতে।  নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশ ছোঁয়া দামে নিম্ন ও মধ্য বৃত্তের মানুষগুলো বড্ড অসহায় হয়ে পড়েছে। নিজেদের জীবন জিবীকার তাগিদেই এসেছেন শ্রম বিক্রি করতে। কেউ স্বামী হারা অসহায় নারী শ্রমিক,কেউবা আবার বাপ-মা হারা অনাথ শিশু। বৃদ্ধরাও রয়েছেন এসব দলে । 

 সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোর থেকে বাসের ছাদ, ট্রাক ও ইঞ্জিনচালিত নছিমন-করিমনে করে দল বেঁধে শ্রমিকেরা কাজের সন্ধানে আসেন শ্রমিকের হাটে। গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা, হাজিরহাট, নয়াবাজার, তাড়াশ ও বড়াইগ্রামের কিছু পয়েন্টে নেমে পড়েন এই শ্রমিকেরা। কৃষকের চাহিদা অনুসারে দরদাম করে মজুরি নির্ধারণ করে চাহিদামতো শ্রমিক নিয়ে যান কৃষকেরা।

ভোররাত থেকে শ্রমিক আর গৃহস্তদের আনাগোনা শুরু হয়। হাট শুরু হলেও বয়স্ক শ্রমিকদের কদর কম হওয়ায় সকাল ৯ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখা যায়। পরে বয়স্করা কম মূল্যেই যেতে হয় মালিকের বাড়িতে আর না হলে ফিরে যেতে হয় নিরাশ হয়ে। এ সব কারনে অনেক বৃদ্ধ শ্রমিকের কপালে চিন্তার ভাঁজও দেখা যায়। 

গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, অপেক্ষা কৃত তরুণ তরুণীদের মজুরী কম এবং কাজের গতি বেশি হওয়ায় ৫জন তরুণ কৃষি শ্রমিক নিলাম। প্রতিদিন মজুরী হিসেবে দিতে হবে ২৫০টাকা থেকে ৩০০টাকা। এবছর ৮ বিঘা জমিতে রসুন লাগিয়েছি। যখন প্রয়োজন হয় তখন নয়াবাজার শ্রমিক হাট থেকেই শ্রমিক নিয়ে যাই। 



পাবনার ভাঙ্গুরা থেকে আসা বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শারীরিক সামর্থ্য অনুযায়ী একজন পুরুষ শ্রমিক গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পান। তবে একজন নারী শ্রমিকরা কম মজুরি পান ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। শিশু শ্রমিকরা পান ২০০ থেকে ৩০০টাকা।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও নওগাঁ থেকে আসা কয়েকজন শ্রমিক জানান, ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে তাঁরা কাজের আশায় এ হাটে আসেন। কারণ, কাজ পেলেই ওই দিন তাদের দুবেলা খাবার জোটে কাজ না পেলে অনাহারে অর্ধাহারে কাটে  দিন।

অনামিকা দাস নামের এক নারী শ্রমিক বলেন, তাঁর স্বামীও দিনমজুর ছিলেন। তবে স্বামী অসুস্থ হওয়ায় তাঁর কাঁধেই এখন পুরো সংসারের দায়িত্ব। তার সঙ্গে ওই গ্রামের আরও ১০ নারী শ্রমিক এসেছেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করলেও মজুরী অর্ধেক।
শ্রমিকনেতা দুলাল শেখ বলেন, বছরের এ সময় সাধারণত অনেক এলাকায় কাজ থাকে না। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষেরা মিলে দল গঠন করে এ হাটে আসেন তারা।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়েই আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ হতো। ২০০৫ সালের দিকে চলনবিলজুড়ে বিনা হালে রসুনের আবাদ শুরু হলে বাড়তি শ্রমিকের চাহিদা দেখা দেয়। এদিকে চলনবিলে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, নওগাঁ,পাবনার চাটমোহর ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলাসহ দেশের নানাপ্রান্ত থেকে এসকল হাটে শ্রমজীবী মানুষ দল বেঁধে আসেন শ্রম বিক্রি করতে। এবছর হাটে প্রচুর শ্রমিক থাকায় সহজেই শ্রমিক পাচ্ছি।

ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল মতিন বলেন, দীর্ঘ বিশ বছর যাবত তাঁর ইউনিয়নের নয়াবাজারে শ্রমিকের হাট বসছে। ধান কাটা ও রসুন রোপণের সময় এই হাটে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার শ্রমিকের সমাগম ঘটে। যা চলনবিলের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় কাজ করতে। দিন শেষে আবার ঘরে ফিরে যায়।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]