#মুজিব আছে বাঙালির অন্তরে: ড. শাহিনূর রহমান। #ষড়যন্ত্র ও শোকের মাস আগস্ট: বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মাবুদ।
প্রকাশ: বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২, ১০:৩১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করার চূড়ান্ত ষড়যন্ত্র পরিণতি পেয়েছিল ১৯৭৫ এর এই মাসে। ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দেশ পূর্ণগঠনে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যাত্রা ৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেমে গেলেও বর্তমানে তার জ্যেষ্ঠকন্যা তারই দেখানো পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলছেন উন্নয়নের মহাসড়কে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭৮৫তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনূর রহমান, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মাবুদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
ড. শাহিনূর রহমান বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করার চূড়ান্ত ষড়যন্ত্র পরিণতি পেয়েছিল ১৯৭৫ এর এই মাসে। ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সদ্য স্বাধীন দেশ ডুবে যায় পরাজিত শক্তির কালো জালে। এক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিলিত চক্রান্তের নাম একজন জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রের পরিবর্তন। শুধু বাঙালির ইতিহাস নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম জঘন্যতম ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় কোনো নজির নেই। ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত যেই দেশ, সেই যুদ্ধের যে মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাকেই হত্যা করা হলো তার নিজের বাসভবনে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাকে হত্যা করতে সাহস পায়নি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা সেই ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিলো মাত্র সাড়ে চার বছরের মাথায়, তাকে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আবার ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে প্রায় একই ধরনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে; আর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। কিন্তু তারা ষড়যন্ত্রে সফল হয়নি। যদিও সেদিনের ঘটনায় আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী প্রাণ হারান। বস্তুত ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও '৭৫-এর ১৫ আগস্ট এক সূত্রে গাঁথা। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মাবুদ বলেন, আগস্ট মাস আমাদের জন্য একটি হৃদয়বিদারক মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে ঘাতকের হাতে নিহত হন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক, প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্ত:সত্তা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নীপতি আবদুর রব সেরনিয়াতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খান। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে শেকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হত্যা করা হয় পুরো পরিবার ও স্বজনদের। দেশ থমকে যায়। সামরিক জান্তা আর বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমতার ভাগাভাগি, হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্র, পাকিস্তানি চেতনার প্রত্যাবর্তনে উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে দেশ। স্বাধীনতা আর রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মূল নীতি ভূলুণ্ঠিত হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর শেষ উত্তরসূরি দুই কন্যা শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। পিতা আর পরিবার হারানো শেখ হাসিনা ৮১ সালে দেশে ফিরে হাল ধরেন দলের। পিতার আদর্শে পরিচালিত দলকে ক্ষমতায় আনেন। দেশ পূর্ণগঠনে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যাত্রা ৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেমে গেলেও বর্তমানে তার জ্যেষ্ঠকন্যা তারই দেখানো পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলছেন উন্নয়নের মহাসড়কে।