লোকটার নাম শাজাহান মিয়া। রাজধানীর সবুজবাগের মায়াকানন এলাকায় ‘ভূমিদস্যু শাজাহান’ নামে পরিচিত। একজনের সঙ্গে অন্যজনের প্যাঁচ লাগিয়ে মাঝখানে তিনি হাজির হন অতঃপর তার স্বার্থ হাসিল করেন বলে অভিযোগ আছে।
সূত্র বলছে, সবুজবাগ মায়াকানন এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি এইসব কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছেন। তিনি সবুজবাগ থানার ২/বি মায়াকানের পুরনো ভাড়াটিয়া। গত প্রায় দুই যুগ আগে ওই বাড়িটি বায়না সূত্রে বিক্রি হয় হাজী মো. জয়নাল আবেদীনের কাছে। ওই সময় বাড়িটির মালিক মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী আসমা আক্তারকে নানা লোভ দেখিয়ে বায়না করে নেয় শাজাহান মিয়া। এরপর আদালতের দোর পেরিয়ে চলতি বছরের শুরুতে আপীল বিভাগ হাজী মো. জয়নাল আবেদীনের নামে রায় দেয়। তারপরও শাজাহান মিয়া ‘অযাচিতভাবে’ বাড়ির মালিক বনে যান। বাড়ির ভাংচুর ও সংস্কারও করছেন বলে জানা গেছে। যদিও বাড়ির বিক্রেতা আসমা আক্তারের ছেলে ফয়সাল শাজাহান মিয়াকে এখনো ‘ভাড়াটিয়া’ হিসেবেই জানেন।
জানা গেছে, এই বাড়িটির মালিক ছিলেন মিসেস আসমা আক্তার। তিনি ১৯৯৯ সালে হাজী মো. জয়নাল আবেদীনের কাছে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বায়না নেন। বায়নার তিন মাস না যেতেই কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই অন্যজনের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে বায়না করেন। অর্থাৎ মায়াকাননের ‘ভূমি দস্যু’ নামে খ্যাত শাজাহান মিয়া নামের একজনের প্ররোচনায় তিনি জমিটি অনৈতিকভাবে বায়না করেন। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে ওই বছরই মামলা করেন হাজী মো. জয়নাল আবেদীন। প্রভাব দেখিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় জয়নাল আবেদীনকে। কিন্তু জয়নাল আবেদীন প্রতিকূলতার মধ্যেও আইনী পথেই হাটেন।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের কাগজ ঘেটে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে এ মামলায় জর্জ কোর্ট আসমা আক্তারের পক্ষে রায় দেন। হতাশ হয়ে হাজী মো. জয়নাল আবেদীন হাইকোর্টের আশ্রয় নেন। ২০১৬ সালে হাইকোর্ট হাজী মো. জয়নাল আবেদনীনের পক্ষে রায় দেন। এমতাবস্তায় আসমা আক্তার আপীল বিভাগের আশ্রয় নেন। অনেক যাছাই-বাছাই শেষে ২০১৯ সালে হাইকোর্টের রায় আপীল বিভাগের রায় বহাল রাখে। পরে আসমা আক্তার রিভিউ করলে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি নুরুজ্জামান, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের ব্যঞ্চ হাজী মো. জয়নাল আবেদীনের পক্ষে রায় দেন।
হাজী মো. জয়নাল আবেদীন ২০১৯ সালে ১৬ জনু মারা যান। তার উত্তারাধিকার হন ৪ ছেলে ২ মেয়ে। ২০১৯ সালের পর থেকে বাবার পক্ষে মামলা চালিয়ে যান মো. মহসীন। জানতে চাইলে জয়নাল আবেদীনের ছেলে মহসীন বলেন, ‘আমরা এই এলাকার অত্যন্ত নিরীহ মানুষ। আশেপাশের কোনো মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নাই, বিরোধ নাই। এই জমিটা কিনতে গিয়ে জীবনের প্রথম ধাক্তা খেলাম আমরা। আমরা ন্যয্য মালিক হওয়া সত্ত্বেও অযাচিতভাবে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। ভয় দেখানো হচ্ছে। সর্বশেষ আপীল বিভাগের রিভিউকে তোয়াক্কা না করে বাড়ি ভাংচুর শুরু করেছে। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দিনরাত চলছে বাড়ি ভাংচুরের কাজ। আর এই ভাংচুর এবং ষড়যন্ত্রের মূল হোতা শাজাহান মিয়া। অথচ তিনি এই বাড়ির কেউ না।’
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর তিনি কোনো এমন জোর জবরদস্তি করছেন জানতে চাইলে শাজাহান মিয়া বলেন, ‘জয়নাল আবেদীনের পর আমি এই জমি কেনার জন্য বায়না করি। ২০০০ সালে এই বাড়ি আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এখানে আমি দোকান করে ভাড়া দেই। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় জমি কীভাবে দখল নিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই জমিসহ বাড়ির বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল দেই তাহলে জমি আমি ছেড়ে দিমু। সর্বোচ্চ আদালত তো রায় দিলো হাজী জয়নাল আবেদীনের পক্ষে এর পরেও কনফিউশন কোথায় এমন প্রশ্নে উত্তরের আমতা আমতা করে তিনি বলেন, জর্জ কোর্ট আমার আসমা আক্তারের পক্ষে। আমার কাছে সব কাগজ আছে। আপনি আসলেই দেখাতে পারবো। আপনি তো কোনো মামলায় নেই। আসমা আক্তার কোথাও উল্লেখ করেন নাই এরপর আপনি উদয় হলেন কোথায় থেকে এমন প্রশ্নে উত্তরের তিনি জানান, তিনি খাজনা দেন দেখাশোনা করেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
মায়াকাননের দুই বাসিন্দা এবং একজন বাড়িওয়ালা নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, শাজাহান মিয়াসহ এলাকার স্থানীয় দুই প্রভাবশালী মিলে এরা জমির ফাঁক-ফোকর খোঁজে বেড়ান। এটাই এদের পেশা-নেশা। কে অসহায় আছেন তাদের খোঁজে বের করে এরকম জটিলতা সৃষ্টি করেন। শাজাহান মিয়া শুধু একই এরকম কর্মকাণ্ডে যুক্ত নন তার বড় ছেলে মো. শাহীন এক মামলার (সি আর ২০৭/১৫, এম এম আদালত নং ১৫) আসামী। যিনি বর্তমানে পলাতক আছেন।
জমির বিক্রেতা আসমা আক্তারের ছেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন কী কমু শাজাহান তো আমাদের ভাড়াটিয়া ছিলো। ও শশুরও আমাদের ভাড়টিয়া ছিলো। আমার বাবাজানের বাড়ি ছিলো এটা আব্বাজান মারা যাওয়ার পরই শুরু হলো জটিলতা।’ সর্বোচ্চা আদালতের রায় হাজী জয়নাল আবেদীনের পক্ষে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা কাগজ এখনো হাতে পাই নাই। তাহলে শাজাহান এখানে কীভাবে আসলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে ভাড়াটিয়া হিসেবে আসছে।’