প্রকাশ: সোমবার, ২০ জুন, ২০২২, ১১:০৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় সিদ্ধান্তের তিন সপ্তাহ পার হলেও মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের প্রক্রিয়া থমকে আছে। এর কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয় এবং হাইকমিশনের একটি সিন্ডিকেটের অসহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ২ জুন জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিং এ মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ উভয় দেশের প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে একমত হয়। মিটিংয়ের সিদ্ধান্তসমূহে উভয় দেশের প্রতিনিধিদল সর্বসম্মতিক্রমে স্বাক্ষর করেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী এসময় ঘোষণা করেন, জুন মাসের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মীপ্রেরণ শুরু হবে। কিন্তু সিদ্ধান্তের প্রায় ৩ সপ্তাহ পার হলেও পরিস্থিতির কোন ধরনের উন্নতি হয়নি। মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা দূতাবাসে ডিম্যান্ড লেটার জমা করার পরও দূতাবাস থেকে বলা হচ্ছে ঢাকায় মেডিকেল করার জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক মেডিকেল সেন্টারসমূহের অনুমোদন প্রয়োজন।
এছাড়া মেডিকেলের রিপোর্ট হাইকমিশনের অনলাইন মডিউলে অন্তর্ভুক্তকরণ, কর্মী নিয়োগকর্তার কাছ থেকে পালিয়ে গেলে সেগুলো হাইকমিশনের মডিউলে প্রতিফলন ইত্যাদির দোহাইও দেখানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এর কোনটিই হাইকমিশনের কাজ নয়। শুধু প্রক্রিয়াটিকে প্রলম্বিত করা বা কর্মী প্রেরণের প্রক্রিয়াটি বন্ধ রাখার জন্যই এসব শর্ত আরোপ করা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা দু’দেশের মধ্যে সকল বিষয়ে যেহেতু ঐকমত্য হয়েছে, সুতরাং হাইকমিশনের কাজ হলো মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীদের কাছ থেকে ডিম্যান্ড লেটার, চুক্তিপত্র জমা গ্রহণপূর্বক তাদের কোম্পানি প্রোফাইল যাচাই-বাছাই এবং প্রয়োজনে কোম্পানি/ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি সাপেক্ষে প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে ডিম্যান্ড লেটার ও চুক্তিপত্র সত্যয়ন করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা। মন্ত্রণালয় মেডিকেল ও আনুষাঙ্গিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পাদনের জন্য অনুমতি প্রদান করবে।
এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, গত ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও মেডিকেল সেন্টারের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। একদিকে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে ডিম্যান্ড লেটার সত্যায়নের পূর্বেই মেডিকেল সেন্টার নির্বাচন করতে মন্ত্রণালয় তালিকা চূড়ান্ত করছে না। এই পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়া সরকার ঢাকা থেকে তথ্য যোগাড় করে স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং নবায়নকৃত মেডিকেল সেন্টারের মনোনয়ন দিয়েছে, সিস্টেম ইনস্টল করেছে এবং মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। এখন নতুন করে মেডিকেল সেন্টার অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে একদিকে যেমন পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক পিছিয়ে যাবে অন্যদিকে মালয়েশিয়া সরকার তাদের অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারের স্থলে নতুন মেডিকেল সেন্টার সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেবে।
এছাড়া মালয়েশিয়া সরকারের নির্ধারিত সিস্টেম প্রোভাইডার কর্তৃক মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে ডিম্যান্ড লেটার, চুক্তিপত্র সত্যয়নসহ অভিবাসন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সফ্টওয়্যার ও ইকুইপমেন্ট ইনস্টল করেছে এবং বাংলাদেশের মন্ত্রণালয়ের সাথেও তাদের মডিউলের সংযোগ স্থাপনের ব্যাপারে অনেক আগেই প্রস্তাব দিয়েছে। এর কোন কিছুর বিষয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ডাটা ব্যাংকের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগে বাধ্যকতা, কখনও ‘র্যান্ডম স্যাম্পলিং’, আবার কখনও বা মালয়েশিয়ার কাছে মন্ত্রণালয়ের নতুন সিস্টেম সমন্বয় করার প্রস্তাব করছে। এভাবে হাইকমিশন এবং মন্ত্রণালয় অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করে পুরো প্রক্রিয়াটিকে বিলম্ব ঘটাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের এধরনের কর্মকা-ের ফলে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে এমন একটি বার্তা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর/মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের বিষয়ে এখনও প্রস্তুত নয় বা খুব একটা আগ্রহী নয়। এতে করে বাংলাদেশের অনুকূলে ইস্যুকৃত মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদিত ডিম্যান্ড লেটারসমূহ পার্শবর্তী অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে। মালয়েশিয়া মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর ভাষ্যমতে ১৫ জুন, ২০২২ তারিখ পর্যন্ত ২,৩০,০০০ কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে তার মন্ত্রণালয় ডিম্যান্ড লেটার ইস্যু করেছে। যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশের পাওয়ার কথা হলেও আমাদের ঢিলেঢালা কর্মকা- এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে পার্শবর্তী দেশ নেপালসহ অন্য ১২ টি সোর্স কান্ট্রিতে চলে যাচ্ছে। দু’দেশের মধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও উপরিউক্ত জটিলতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারটি হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসকল দিক বিবেচনা করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান এবং দেশের সার্বিক স্বার্থে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্তৃক ডিম্যান্ড লেটার ও চুক্তিপত্র সত্যয়ন শুরু করা আবশ্যক এবং এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় হতে হাইকমিশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।