
প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পরিপূরক শুল্ক বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার কারণে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের উচ্চ বা বেশি বিল পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ।
সোমবার (১৩ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ এর পর্যালোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশ, সমাজ ও অর্থনীতি যখন ডিজিটাল ও ভার্চুয়াল সংযোগ সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছে তখন মোবাইল ফোন তথা ইন্টারনেটের ব্যবহারের ওপর অতিরিক্ত করারোপ পর্যালোচনা প্রসূত হয়নি। সমসাময়িক করোনা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে এ সময়ে বরং আরও কমানো দরকার ছিল। সঞ্চয়ের ওপর যেকোনো অতিরিক্ত করারোপ মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে চাপ বাড়াবে।
প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ বলেন, বাজেটে বিদেশে পাচার করা কালোটাকা সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে; তা আমরা (আইবিএফবি) সমর্থন করি না। কারণ বাজেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও সুশাসনের কথা থাকলেও যেভাবে পাচার করা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে- তা সমর্থনযোগ্য নয়। এ ছাড়া মাত্র ৭ শতাংশ হারে কর প্রদান করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে নিয়মিত করদাতারা আরও নিরুৎসাহিত হবে।
তিনি আরও বলেন, পাচার করা টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে না; এ ধরনের এমনেস্টি প্রদান করা হলে অর্থনীতিতে নীতি নৈতিকতার ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংস্থা বা দ্বিপাক্ষিক দেশের সাথে সম্পাদিত চুক্তিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হবে।
হুমায়ুন রশিদ বলেন, অর্থনীতির মেরুদণ্ড আর্থিক খাত তথা ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ও প্রতিকার প্রতিবিধানের কোনও পদক্ষেপের (এমনকি গতবারের বাজেটে উচ্চারিত ব্যাংক কমিশন গঠনের) উচ্চবাচ্যতা এবারের বাজেটে নেই। আর্থিক খাত ঘুরে না দাঁড়ালে, গোটা অর্থনীতি আরও নাজুক হয়ে পড়বে। এদিকে, সঞ্চয়ের ওপর যেকোনও অতিরিক্ত করারোপ মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে চাপ বাড়াবে বলে জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে হুমায়ুন রশিদ বলেন, উন্নয়ন-অনুন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে অদক্ষতা ও বিলম্ব দূরীকরণের ক্ষেত্রে অর্থছাড় ও ব্যয় প্রবাহে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানকল্পে অর্থবছর শুরুতেই অর্থছাড়ের একটি নির্দেশনা পূর্ববর্তী বাজেটে দেওয়া হয়েছিল। অথচ ২০০৬ সাল থেকে প্রবর্তিত মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো অনুশাসনের দ্বারা ইতোমধ্যে অর্থছাড় বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়াও (তিন বছর) মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো হিসেবে যে পদ্ধতি প্রচলিত আছে, তা অনুসরণই যথেষ্ট। উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারকে অর্থ পরিশোধ বা রিইমবার্জমেন্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে (সিআইবিতে শ্রেণীকরণ এড়াতে) প্রকল্প পরিচালক ও ব্যাংকার সমন্বয়ে সৃষ্ট জটিলতা সংস্কারের আওতায় আনা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অর্থবছরের সময়সীমা পরিবর্তন করেও (জানুয়ারি-ডিসেম্বর বা এপ্রিল-মার্চ) গুনগতমান বজায় রেখে স্বচ্ছতার সাথে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনের চিরন্তন সমস্যার সুষম সমাধান হতে পারে।
আইবিএফবি প্রেসিডেন্ট বলেন, করোনা সংকটে বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার মতো খাতগুলো অগ্রাধিকার পেয়েও যেন পায়নি। করোনার প্রভাবে বাজেট প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের গুরুত্ব আলোচিত হলেও সেখানে বরাদ্দ নমিনাল টার্মে আপেক্ষিকভাবে কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শিক্ষা, দক্ষ জনসম্পদ তৈরি, ফর্মাল ও ইনফর্মাল সেক্টরে কর্মসৃজনমূলক শিল্প উদ্যোগ, আই টি খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রয়োজন ছিল।
হুমায়ুন রশিদ বলেন, বলেন, কৃষিবিদ, কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষক ও কৃষি উপকরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাইভেট সেক্টরও এখানে সরাসরি জড়িত। নতুন নতুন উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে বাংলাদেশে প্রাইভেট সেক্টরের অবদান কম নয়। সেজন্য পাবলিক সেক্টরের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরেও বাজেট বরাদ্দ থাকা উচিত। রাসায়নিক সারের তুলনায় জৈবসারে মাটির গুণাগুণ ভাল করে বিধায় রাসায়নিক সারের মতো করে বাজেটে জৈবসার উৎপাদনে ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।