
কুড়িগ্রামের উলিপুরের কৃষকরা কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পাকা বোরোধান ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়া এবং শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পৌর শহরের বাকরের হাট দল বাড়ীর বিল, থেতরাই ইউনিয়নে গোপালের ছড়া বিল, গুনাইগাছ ইউনিয়নে কালুডাঙা ভূতছড়ার বিল, ধরনীবাড়ী ইউনিয়নে কেকতীর পাড়, ধামশ্রেণী ইউনিয়নের সুড়িরডারা এলাকাসহ অসংখ্য এলাকার ধান ইতিমধ্যে বিনিষ্ট হয়ে গেছে। ফলে শত শত কৃষক বিপর্যস্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এলাকার অধিকাংশ জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া ও টানা বৃষ্টির কারণে কৃষক ৩/৪ দিন ধান কাটতে না পাওয়ায় সবার জমির ধান একসাথে বিলম্বে পাকার কারণে কাটার চাপ ও অধিক মজুরি হার হওয়ায় সর্বত্র শ্রমিক সংকট প্রকোট আকার ধারণ করেছে।শ্রমিক সংকটে বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক।
কৃষকরা উপায়ন্তর না পেয়ে পরিবারের স্ত্রী-পুত্রসহ অন্যান্য সদস্যরা পানি থেকে পাকা ধান ঘরে তুলতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ২২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত কৃষক ৩০/৩৫ শতাংশ জমির ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। চলতি ৩/৪ দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার অধিকাংশ বোরো ব্লোকে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পৌর শহরের মন্ডল পাড়া এলাকার কৃষক নওয়াব আলী জানান, মোর (আমার) ২৫ শতক জমির ধান কামলা (শ্রমিক) বিনে পঁচি (পঁচে) গেইছে (গেছে)। সরকার যদি ধান কাটার মেশিন দিলে (দিতো) হয় টেকা (টাকা) নেক ধান গুল্যাতো (গুলো) কাটপের (কাটতে) পাইনো হয় (পেতাম)। এদন (এমন) কষ্ট করি আর ধান আবাদ করব্যার (করবো) নই (না)। একই কথা বলেন ওই এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম তাঁর ৩০ শতাংশ ও ইসাহক আলীর ২৫ শতাংশ জমির ধান পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে।
বাকরের হাট দলবাড়ী এলাকার কৃষক অবসর প্রাপ্ত বিডিআর নুরুজ্জামান জানান, শ্রমিকের মজুরি হার অধিক হওয়ায় ৯৫ শতাংশ জমির ধান পানিতে ডুবে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। শ্রমিকেরা ১ একর জমির ধান কাটাই-মাড়াই করতে ৩০ হাজার টাকা নিচ্ছে। শ্রমিকরা বলেন, কাজ করালে কাজ করেন না করালে নাই।
গুনাইগাছ ইউনিয়নের কালুডাঙা ভূতছড়া বিলে বোরধান চাষী আমজাদ হোসেনের ৭০ শতাংশ জমির ধান পানিতে ডুবে শ্রমিক সংকটে কাটতে পারে নি। কৃষক আমজাদের ঘরে উঠতি ফসল কেটে সমান ভাগে ভাগ করে নেয়ার ঘোষণা দিলেও কেউ কেটে নিতে রাজি হয়নি তাঁর ধান। ফলে জমিতে ধান জমিতেই পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। আগামী দিনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পরিবার কি ভাবে চলবে সে কথা জানান তিনি।
ধরনীবাড়ী ইউনিয়নে কেকতীর পাড়ের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, ১ একর জমিতে বোরোধান আবাদ করেছেন। জমি শুকনো থাকাতে তাঁর ২৫ শতাংশ জমির ধান পাকছে। সরকারের ভর্তুকিতে দেয়া ধান কাটার মেশিনে ধান কাটবে বলে ঠিক করেন। কিন্তু মেশিন আজকাল আসে করে বৃষ্টির পানিতে ধান ডুবে গিয়ে ধান কাটতে পারে নাই।
শুধু এসব কৃষকের ধান নষ্ট হয়নি! এদের মতো হাজারো কৃষকের স্বপ্ন বৃষ্টির পানি, শ্রমিক সংকট, অধিক মজুরি ও সরকারের ভর্তুকিতে দেয়া ধান কাটার মেশিন মালিকের মিথ্যা আশ্বাসে দেখা সোনালী স্বপ্নগুলো পানিতে ডুবে গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকতা সাইফুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় ৭টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দেয়া হয়েছে,তার ৫০% মালিক আমরা। যাদেরকে মেশিন দিয়েছি, কৃষকদের স্বার্থে আমি তাদের সাথে কথা বলব। যাতে কম রাখে এবং কৃষককে প্রতিশ্রুতি দিলে সেটা যেন রক্ষা করে।