প্রকাশ: সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মাহবুবুল হক শাকিল। একজন নন্দিত জননেতার নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি ছিলেন স্টাইলিষ্ট রাজনীতির মডেল। চলন বলন আর পোষাক পরিচ্ছেদে বঙ্গ বন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের অনুকরণে তিনি ছিলেন একজন আ.লীগ পাগল মানুষ। সদা-সর্বদা রাজনৈতিক ও সামাজিক বিচরণে বঙ্গ বন্ধুর পোশাক ছিল তাঁর প্রিয় ফ্যাশনের অন্যতম এক উপকরণ। দল আর দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে তাঁর ছিল অকৃত্রিম হৃদ্ধ্যতা। শুধু তাই নয়, দলীয় পরিমন্ডলের বাইরেও তিনি ছিলেন সম্প্রীতি বান্ধব একজন অনন্য মানুষ। ফলে সকল রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সাথে তাঁর ছিল দৃশ্যমান সখ্যতা। তিনি ছিলেন একজন উদারমনা ব্যতিক্রমী এক রাজনীতিক।
ছাত্র জীবন থেকে মাহবুবুল হক শাকিল ছিলেন অসম্ভব বন্ধু বৎসল একজন মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফএইচ হলের সাবেক জিএস, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক। মাহবুবুল হক শাকিল ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর বাবা আইনজীবী জহিরুল হক খোকা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ময়মনসিংহ শহরের বাঘমারা এলাকায় তার বেড়ে ওঠা। সাবেক এই ছাত্রনেতা সাহিত্য অনুরাগী ও লেখক ছিলেন।
সময়টা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল সেই সময়ে মাহবুবুল হক শাকিল খুব দ্রতই নেতৃত্বগুণে ছাত্রলীগের প্রথমসারির নেতাদের চোখে পড়েন।স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে সক্রিয় থেকে নিজে মেলে ধরেন রাজনৈতিক নতুন অবয়বে। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সিআরআই-এর শুরু যাত্রা থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জড়িত ছিলেন শাকিল।ছাত্ররাজনীতি করার সময় থেকেই বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রেস রিলিজ তৈরির কাজ নিজ উদ্যোগেই করতেন। ছাত্ররাজনীতি শেষ করে দলীয় নেত্রীর পাশে নানাবিধ লেখালেখির কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ২০০১-২০০৬ সালের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার প্রেস সহকারীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে মাহবুবুল হক শাকিলকে উপ-প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন এবং পরে যুগ্ম-সচিবের মর্যাদায় বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) হিসেবে নিয়োগ দেন।
তীক্ষè মেধাসম্পন্ন সজ্জন মানুষ ছিলেন মাহবুবুল হক শাকিল । দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভাববিনিময় করার পারঙ্গমতার কারণে রাজনীতিতে তিনি ছিলেন অগ্রসরমান। তাঁর মেধা ও প্রাজ্ঞতায় কেন্দ্রীয় ও ময়মনসিংহের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবীদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন বেশ সহজেই। মামলা-হামলা উপেক্ষা করে দলের প্রতি তাঁর ত্যাগ এবং সাংগঠনিক দক্ষতা, অনলবর্ষী বক্তা ও ব্যতিক্রমী বাচনভঙ্গিমার কারণে একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবীদ হিসেবেও সাধারনের মনে খুব সহজেই ঠাঁয় করে নিয়েছিলেন তিনি। নিয়মিত জনসংযোগ-কর্মী সংযোগ আর বিচক্ষন নেতৃত্বের বহি:প্রকাশ দৃশ্যমান হয়ে ফুটে উঠেছিল বলেই তার স্মৃতি ময়মনসিংহবাসীসহ সারাদেশের মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিন্তু ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর গুলশানের এক রেস্টুরেন্টে মারা যান। সেই অকালপ্রয়াত কবি মাহবুবুল হক শাকিলের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী আজ।