শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিরোনাম: দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫    মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির    মৎস খাতে বাংলাদেশকে ১৭২ কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে জাপান     আইসিসির এলিট প্যানেলে যুক্ত হলেন আম্পায়ার সৈকত    জেনে নিন আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস    শুক্রবার নাগাদ আসতে পারে ভারতের পেঁয়াজ    বিএনপি স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায়: কাদের   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ’র সব ঘাতককে ধরা হোক
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১, ১০:২৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকা-টি ব্যক্তিগত রেষারেষি বা ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে ঘটেনি বলে অনেকেরই বিশ্বাস। অনেকের ধারণা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রলম্বিত করার জন্য এই হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে কাজও করছিলেন। মাতৃভূমি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আর কতদিন রোহিঙ্গারা শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করবেন, তাদেরকে যে কোনোভাবেই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে, এমন দৃঢ়মনোভাব ছিল মুহিবুল্লাহর। কিন্তু ঘাতকরা তার ঘরে তার সঙ্গে গল্প করার ছলে সামনাসামনি তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ থেকে অবশ্য একটা প্রশ্ন ওঠে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাহলে কি করেন। 

কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নানা সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে তুলছে। এ নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে বেশ আগে থেকেই। লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করায় বাংলাদেশকে কঠিন একটা অবস্থার মুখে ফেলে দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একটি উপায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যতো দ্রুত করা যায়। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। গত বুধবার রাতে উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে তাকে হত্যার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মুহিবুল্লাহর খুনের ঘটনাটি নানা কারণে সাধারণ হত্যা হিসেবে মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি যেমন রোহিঙ্গা নেতা, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তিনি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া ও তাদের মানবাধিকার নিয়ে দেশে-বিদেশে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার দাবি করেছেন। এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়তা কামনা করেছিলেন। বলা বাহুল্য, তার হত্যার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। গত শুক্রবার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে গত ৪৮ মাসে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে সংঘাতে ২২৬ জনের নিহত হওয়ার পরিসংখ্যান সেখানকার নাজুক পরিস্থিতিরই ইঙ্গিতবহ। আমরা মনে করি, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো একান্তভাবেই জরুরি। নিহত মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পক্ষের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন বলে তাকে হত্যার ফলে রোহিঙ্গাদের ভেতর প্রত্যাবাসনের পক্ষের দাবিটি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে এমন একজন পরিচিত নেতার হত্যার পর রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের মধ্যে সংঘাত বাড়ার শঙ্কাও কোনোভাবে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 

তাছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের পর প্রত্যাবাসনের পক্ষের সবার নিরাপত্তা এবং প্রত্যাবাসন বিরোধীদের শক্তি পাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশেরও প্রধানতম দাবি প্রত্যাবাসন। জাতিসংঘের ভাষণে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করতেই হবে বলে জোর দাবি জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক শক্তির নিষ্ক্রিয়তা দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হতাশ প্রকাশ করেন। প্রায় ২১ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে অবস্থান করছে। অত্যাচারী মিয়ানমার সরকারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাকে বাস্তুভিটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, বহু রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। মিয়ানমারের এমন নিষ্ঠুর আচরণ মানবতাবিরোধী তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সরব হতে হবে। নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকলে চলবে না। বাংলাদেশের পাশে আন্তর্জাতিক শক্তিকে দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে হবে। যে সংকট মিয়ানমার তৈরি করেছে, মিয়ানমারকেই তার সমাধান করতে হবে এবং যুগ যুগ ধরে থাকা নিজের নাগরিকদের দেশে ফেরাতেই হবে। বাংলাদেশের এ দাবির সমর্থনে আন্তর্জাতিক শক্তিকে আগের চেয়ে আরো জোরাল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে। এমনকি মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিও করে। এর আগে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য দুই দফায় তারিখ নির্ধারণ হলেও তা সফল হয়নি। পরিশেষে বলতে হচ্ছে, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর হত্যার ঘটনাটি দেশের জন্য বড় আঘাত। রোহিঙ্গাদের একটি চক্র প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করতে চায় বলেই এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে- বিশেষজ্ঞদের মত আমলে নিয়েই সেই চক্রের সন্ধান করা জরুরি। স্বাভাবিকভাবেই এটি স্পষ্ট, মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বের কারণে তিনি ওই চক্রের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। 

আমরা এও জানি, ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামে সংগঠন গড়ে তুলে মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের অধিকারের কথা বলতেন। প্রতিবেদনে প্রকাশ, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব থেকে ফোন করে কয়েক দিন আগে থেকেই খুন করার হুমকি দিয়ে আসছিল। হুমকির বিষয়টি তিনি প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি।  যারা রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে গ্রেফতার করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতেই হবে। ঘাতকদের ধরতে পারলে তাদের নেপথ্যে কে কে রয়েছে তা সহজেই বের হয়ে আসবে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]