করোনাকালে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির উন্মেষ ঘটেছে: অধ্যাপক ড. অরবিন্দ সাহা
প্রকাশ: সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১, ১০:৩৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বিশ্ব যে চিরাচরিত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত ছিল এবং অর্থনীতিভাবে বিগত দশকগুলোতে যে অগ্রগতির ধারায় এগুচ্ছিল সেখানে করোনায় ব্যাপকভাবে তার নেতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। দীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় শিক্ষা ব্যবস্থার ক্রমশ পরিবর্তন হয়েছে এবং এটাতে আধুনিকায়ন হয়েছে। এই করোনাকালে আমাদের যেটা উপকার হয়েছে সেটা হলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যাপক উন্মেষ ঘটেছে। করোনা যদি না আসতো তাহলে আমরা এই যে জুমে সংলাপ, মিটিং, অনলাইনে ক্লাস করার যে প্রক্রিয়া সেটা এতো তরান্বিত হতো না।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪১২তম পর্বে সোমবার আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. অরবিন্দ সাহা, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, বেলজিয়াম বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ড. অরবিন্দ সাহা বলেন, চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা এমনই একটি দুর্যোগ ও মহামারি যা বৈশ্বিক সংকটের একটি নাম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লকডাউন শুরুর দিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শিক্ষাধারা অব্যাহত রাখতে অনেক সময়ক্ষেপণ করতে হয়েছিল। কিভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান বজায় রেখে পড়াশোনার মধ্যে মনোনিবেশ করানো যায়, সে ব্যাপারে আমাদের দেশের শিক্ষা প্রশাসকগণ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন এবং এক পর্যায়ে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। এই করোনাকালে আমাদের যেটা উপকার হয়েছে সেটা হলও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যাপক উন্মেষ হয়েছে। এই করোনা যদি না আসতো তাহলে এই যে আমরা জুমে সংলাপ, মিটিং, অনলাইনে ক্লাস করার যে পক্রিয়া সেটা এতো তরান্বিত হতো না। এই দীর্ঘ করোনা মহামারিকালে ২৪৪ কর্মদিবসে আমার যদি প্রতি সপ্তাহে ৯টি করে ক্লাস থাকতো তাহলে আমি কত ঘণ্টা ছাত্রদের বঞ্ছিত করেছি? এবং আমার বিবেক জাতির কাছে, সমাজের কাছে, আমার প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছি এইজন্য যে আমি আমার ক্লাসগুলো নিতে পারছি না, ছাত্রদের কাছ থেকে দূরে সরে আছি। আমি গত কয়েকদিন আগেও অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সময় সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বলেছিলাম তোমরা আসো, আমি তোমাদের সাথে সাক্ষাতে কথা বলবো। ওরা আমার এই কথা শুনে এতো খুশি হয়েছে যে, তারা বলে উঠলো, স্যার, আজকে অনেকদিন পর আপনার কাছ থেকে এমন ডাক পেলাম। আমরা আপনার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারবো। শুধু বাংলাদেশে নয়, এই করোনায় বিশ্বের অনেক দেশেই শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই স্থবির হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী এখনো ভালোভাবে অভ্যস্ত নয়, এমনকি শিক্ষকদের মাঝেও রয়েছে অনেক অনাগ্রহ, অসহযোগিতা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, যা অনলাইন শিক্ষা ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বড় একটি চ্যালেঞ্জ। শিক্ষকরা মনে করেন যে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক সহজেই ক্লাস নিয়ন্ত্রণ এবং একই সঙ্গে সব শিক্ষার্থীর কাজ মূল্যায়ন করতে পারেন। তাছাড়া শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে কম মনোযোগী শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্লাসে আকৃষ্ট করতে পারেন বলে শিক্ষকদের ধারণা। শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জনের জন্য লাইব্রেরী একটা বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও লাইব্রেরি পুরো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যথাযথ বই পাঠ করে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না। কোন কোন দেশে বিভিন্ন পাবলিশার্স তাদের ইলেকট্রনিক লাইব্রেরী শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কাছে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। উন্নত বিশ্বে এমনটি ঘটলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সেটা হচ্ছে না।