শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিরোনাম: দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫    মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির    মৎস খাতে বাংলাদেশকে ১৭২ কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে জাপান     আইসিসির এলিট প্যানেলে যুক্ত হলেন আম্পায়ার সৈকত    জেনে নিন আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস    শুক্রবার নাগাদ আসতে পারে ভারতের পেঁয়াজ    বিএনপি স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায়: কাদের   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বাল্যবিবাহ রোধে প্রয়োজন নারীর নিরাপত্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ৫ জুন, ২০২১, ৩:৫১ এএম | অনলাইন সংস্করণ

বাল্যবিবাহ একটি অপরাধ। তবে যথার্থ নিরাপত্তা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই অনেক ক্ষেত্রে দেশে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে থাকে। আমাদের দেশে বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল এবং কম শিক্ষিত পরিবারেই সাধারনত বাল্যবিবাহ বেশি হয়ে থাকে। তবে এ ছাড়া যে কারণে বাল্যবিবাহের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে সেটি হচ্ছে নিরাপত্তা। অর্থাৎ মেয়ের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই বাবা-মা কিশোরী বয়সেই মেয়ের বিয়ে থাকেন। অথচ বাল্যবিবাহ রোধ করতে পারলে বেড়িয়ে আসতে পারে অনেক মেধাবী নারী, যাদের মাধ্যমে দেশ তথা সমাজ হতে পারে অনেক বেশি উপকৃত।

বাল্যবিবাহের কারণে ঝড়ে যাচ্ছে অনেক মেধাবী তরুণী। তাদেরই একজন বান্দরবানের লিপি (ছদ্মনাম)। ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেয় লিপি। সবগুলো পরীক্ষায়ই তার ভালো হয়েছে। আর স্কুলের শিক্ষকরাও তাকিয়ে আছে তার রেজাল্টের দিকে। কারন একমাত্র লিপিই তাদের স্কুলের খুব ভালো শিক্ষার্থী। সাড়ে তিন মাইল দূর বিলছড়ি গ্রাম থেকে পড়তে আসে বান্দরবানের লামা হাই স্কুলে। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই বাবা-মা দু’জনের তোড়জোড় শুরু হয় বিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিয়েতে কোন মত না থাকলেও রেজাল্ট বের হওয়ার দিনই তার বিয়ের দিন ঠিক হয়। পুরো স্কুলে একমাত্র লিপিই পায় এ প্লাস।

রেজাল্ট বের হলে সবাই বলছিল, মেয়েটা আর একটু পড়ালেখা করতে পারলে ভালো হত। ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারত। কিন্তু লিপির বাবা-মায়ের এক কথা। মেয়ে বড় হয়েছে। দেখতেও সুন্দর। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে অনেক বখাটে ছেলে বিরক্ত করত। এখন যদি কোন বিপদ হয়ে যায়! আর প্রতিদিন কে তাকে কলেজে নিয়ে যাবে? আর নিয়ে আসবে? তাই বিয়ে দিলেই শান্তি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ঘটনা শুধু লিপির ক্ষেত্রে নয়। ঘটছে আরো অনেক কিশোরী শিক্ষার্থীর জীবনে। নিরাপত্তার অভাব আর দারিদ্র্যতার কারনে স্কুলের গন্ডি পার হতে না হতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হচ্ছে অনেক কিশোরীকে। আর বাল্য বিয়ের কারনে অকালেই ভেঙ্গে যাচ্ছে এসব শিক্ষার্থীর স্বপ্ন।

তাদের মতে, সমাজে নারীর অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে পারলে এবং নারী ও শিশুর উপর সব ধরনের সহিংসতা রোধ করা গেলে বাল্য বিয়ের হার একেবারেই কমে আসবে।

সূত্র মতে, ২০১৪ সালে পিইসি পাশ করা অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। সেবার পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সব মিলিয়ে ৩০,৯৪,২৬৫ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২০,৪৭,৭৭৯ জন। এসময় অংশ নেয়নি প্রায় ১০,৪৬,০০০ জন শিক্ষার্থীর। এসব শিক্ষার্থী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে ঝড়ে পড়েছে। আর এসব ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা বিশাল অংশই হচ্ছে কিশোরী শিক্ষার্থী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার পেছেনে নিরাপত্তা একটি বড় কারন। এছাড়াও অনেকে দারিদ্র্যতার কারনে স্কুল ছেড়ে দিয়ে বাবা-মা’র সাথে কাজ করে।

তাদের মতে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সবার বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। এজন্য সরকার দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা এবং উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো মেয়েরা রাস্তায় নিরাপদ অনুভব করে না। বিশেষ করে গ্রামে এই নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েই বেশী চিন্তিত থাকেন অভিভাবকরা।

এর কারন হিসেবে তারা বলেন, সাধারনত এখানে হেঁটেই স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয় মেয়েদের। কিন্তু সব-সময় স্কুলে আসা-যাওয়ার সঙ্গী পাওয়া যায় না। যার ফলে তারা নিরাপদ থাকেনা। আর এ কারনেই অভিভাবকরা মেয়েদের বিয়ে দিয়েই নিশ্চিত হতে চান।

মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনোয়ারা বেগম বলেন, কিশোরী শিক্ষার্থীদের স্কুল হতে ঝড়ে পড়ার বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের। তার মতে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদের বিশেষ করে ছেলেদের মানসিকতাও পাল্টাতে হবে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করাতে পারলে অভিভাকরাও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারবে।



এজন্য তিনি অভিভাবকদের প্রতি তাদের ছেলে সন্তানদেরও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার প্রতি জোর দেন।

তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে ছেলেরা যদি এ বিষয়ে নৈতিক শিক্ষা পায় তবে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এছাড়াও তিনি যেকোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার সাথে প্রশাসনের তড়িৎ ব্যবস্থার প্রতি জোর দেন এবং তাদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

তিনি বলেন, এতে করে অনেকে সাবধান হয়ে যাবে। এবং কিশোরী বা নারীদের উক্তত্য করা থেকে বিরত থাকবে।

মোদ্দ কথা হচ্ছে কেবল সরকারের একার পক্ষে বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বাসস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]