শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিরোনাম: দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫    মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির    মৎস খাতে বাংলাদেশকে ১৭২ কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে জাপান     আইসিসির এলিট প্যানেলে যুক্ত হলেন আম্পায়ার সৈকত    জেনে নিন আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস    শুক্রবার নাগাদ আসতে পারে ভারতের পেঁয়াজ    বিএনপি স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায়: কাদের   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
গণতন্ত্রের হত্যাকারী জিয়া
উৎপল দাস
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১, ১২:১৬ এএম | অনলাইন সংস্করণ

স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন সাবেক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান। একাধারে রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, প্রধান আইন প্রশাসক পদে থেকে জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ৩ জুন প্রহসনের এক নির্বাচন করেছিলেন। এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিধি সংবিধান তো বটেই সেনা আইনেও নেই। সব ধরনের প্রচলিত আইনী বিধিমালার তোয়াক্কা না করে তার ওই নির্বাচনের দিনকে বাংলাদেশের ইতিহাসের কলংকিত দিন হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। 

এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, পিএসসি ভোরের পাতাকে বলেন, ‘জিয়াউর রহমান এদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মতো বেসিক ডেমোক্রেসি বা মৌলিক গণতন্ত্রের মতো বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে প্রহসন করে গেছেন। পৃথিবীর কোনো দেশেই গণতন্ত্রের আগে বা পরে কোনো উপসর্গ বা অনুসর্গ ব্যবহার করা হয়নি। গণতন্ত্র মানেই গণতন্ত্র। সেখানে নিজের স্বার্থ এবং ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যই জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার পরও নির্বাচন করেছিলেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘শুধু সামরিক আইনে নয়, দেশের সংবিধান অনুযায়ী সামরিক বাহিনীর কোনো সদস্য চাকরিরত অবস্থায় নির্বাচন তো দূরের কথা অন্য কোনো সংগঠনেও সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। জিয়াউর রহমানের মতো অন্যায়কারীর তখন কোর্ট মার্শাল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে, নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছে।’ 



তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করতে খুনতন্ত্র কায়েম করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে সশস্ত্র বাহিনীর জওয়ান ও অফিসারদের হত্যা করে খুনতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। দিনের পর দিন কারফিউ দিয়ে দেশে কারফিউতন্ত্র কায়েম করেছিলেন, তবু নিজে রক্ষা পাননি। আর এ দেশে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে ষড়যন্ত্রের নীলনকশাই বাস্তবায়ন করে গেছেন।’ জিয়াউর রহমানের ১৯৭৮ সালের ৩ জুনের নির্বাচন প্রসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ) চেয়ারম্যান এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ভোরের পাতাকে বলেন, ‘ইতিহাসে এমন নির্বাচনের ঘটনা নজিরবিহীন কা-। যেকোনো মূল্যে, যেকোনোভাবে ক্ষমতাকে হালাল করার জন্য জিয়াউর রহমান এ ধরনের  প্রহসনের নির্বাচন করেছিলেন। গণতন্ত্রের মূল্যবোধের কোনো কাঠামোর সাথেই এ নির্বাচন সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না বলেও অভিমত দেন তিনি। 

উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। প্রায় ৪০ দিন পর জুনের ৩ তারিখে নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐ বছরের ১ মার্চ থেকে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। সেদিন জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) সহ ৬টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠিত হয়। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট প্রার্থী। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ৫টি দলের সমন্বয়ে গঠিত গণ ঐক্য জোটের প্রার্থী জেনারেল (অব.) এম এ জি ওসমানী। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটার তালিকা বিক্রি হচ্ছিল ৬০ হাজার মার্কিন ডলারে। মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে জেনারেল ওসমানীর পক্ষে নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করে পোস্টার ছাপানো কিংবা ভোটার তালিকা কেনার সামর্থ্য ছিল না। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই জেনারেল ওসমানী বিভিন্ন অনিয়মের কথা বলছিলেন। সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছাপানো জিয়ার নির্বাচনী পোস্টারে পুরো দেশ ছেয়ে যায়। সরকারি গণমাধ্যমে ঢাকঢোল পিটিয়ে তার নির্বাচনী সমাবেশের খবর প্রচারিত হয়। এমনকি দেশের জেলা প্রশাসনগুলো নিজেরাই জিয়ার সমাবেশের লিফলেট ছাপিয়ে জনগণের মধ্যে বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছিল। ওসমানী অভিযোগ করেন গণমাধ্যমে তার বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার হচ্ছে। এমনকি সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকায় তাকে নিয়ে একের পর এক ভিত্তিহীন রিপোর্ট প্রকাশিত হতে থাকে। এই কলংকিত নির্বাচন নিয়ে আরেকটা বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে, সাধারণত বাংলাদেশে বর্ষা শুরু হয় জুন মাসে। এটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযুক্ত সময় না। জিয়ার এতে কোন সমস্যা হয়নি, তিনি সরকারি হেলিকপ্টারে চড়ে পুরো দেশে জনসমাবেশ করতে থাকেন। অন্যদিকে জেনারেল ওসমানী জিপে চড়ে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। প্রবল বৃষ্টির কারণে তার পক্ষে গ্রামাঞ্চলে প্রচারণা চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। এই অবস্থায় গণ ঐক্য জোটের ৯০ দিনের জন্য নির্বাচন পেছানোর আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। নির্বাচন কাভার করতে আসা নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক উইলিয়াম বর্ডার ১৯৭৮ সালের ৪ জুন প্রকাশিত রিপোর্টে প্রচুর জাল ভোট আর প্রতিপক্ষ এজেন্টদের নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার কথা লেখেন। এই নির্বাচনে গণ ঐক্য জোটের ৪০ জন কর্মী নিহত হয়। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা করে ২০০টির অধিক কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্ট আর নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের বের করে দেয়। 

ভোরের পাতা/পি

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


আরও সংবাদ   বিষয়:  গণতন্ত্র   হত্যাকারী   জিয়া    কলংকিত  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]