শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিরোনাম: মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির    মৎস খাতে বাংলাদেশকে ১৭২ কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে জাপান     আইসিসির এলিট প্যানেলে যুক্ত হলেন আম্পায়ার সৈকত    জেনে নিন আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস    শুক্রবার নাগাদ আসতে পারে ভারতের পেঁয়াজ    বিএনপি স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায়: কাদের    বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়াই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য চুরির মধ্যে পার্থক্য কী?
ড. সেলিম মাহমুদ
প্রকাশ: বুধবার, ১৯ মে, ২০২১, ১০:৪১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশে বিরাজমান সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকের স্বাধীনতার সামগ্রিকতাকে আড়াল করে সাংবাদিক রোজিনার বিষয়টি নিয়ে একটি মহল যেভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং দেশে-বিদেশে এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেভাবে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে, তাতে মনে হচ্ছে এটি একটি নতুন ষড়যন্ত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ এমনভাবে মন্তব্য করছেন যেন রাষ্ট্র সাংবাদিকগণের বিরুদ্ধে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। সাংবাদিক রোজিনার বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ ধুম্রজাল তৈরি করার চেষ্টা করছে। এই বিষয়ে কে অপরাধী, কে অপরাধী নয়- আমি এটি নিয়ে কোন মন্তব্য করবো না। এটি এখন একটি বিচারিক বিষয়। তবে আমাদের সংবিধান, প্রচলিত আইন ও নীতি- নৈতিকতার আলোকে রাষ্ট্রীয় কোন তথ্য জানার বা সংগ্রহ করার বিষয় নিয়ে কিছু বলবো। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না, জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণে আজ বাংলাদেশের  গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকগণ অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছেন। তিনিই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। দেশে এতোগুলো প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অনুমোদন তিনিই দিয়েছেন। 

সাংবাদিকগণের সামাজিক মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি ভীষণভাবে সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল। এই বিষয়গুলো নতুন করে বলার দরকার নেই। এইসব বিষয় আমরা সবাই জানি। তবে কিছু মৌলিক বিষয়ে আমাদের আরও ধারণা থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে তথ্য অধিকারের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই প্রতিষ্ঠিত করেছেন তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ সংসদে প্রণয়ন করে। এই আইন অনুযায়ী স্বাধীন তথ্য কমিশন তিনিই গঠন করেছিলেন। সেই সামরিক সরকারের সময় থেকে  এই ধরনের একটি কমিশনের কথা অনেকেই বলে আসছিল। শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া কোন সরকারই এটি করার উদ্যোগ নেয়নি। তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকসহ সকলেরই তথ্য জানার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অনেকেই এটি করছেন না। অনেকেই বুঝে বা না বুঝে অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট নিয়ে কথা বলছেন। ১৯২৩ সালে প্রবর্তিত এই আইন উপমহাদেশের সকল দেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বিদ্যমান রয়েছে। আওয়ামী লীগের বাইরে কোন সরকারের সময় এই আইন নিয়ে কথা হয়নি। শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এসকল বিষয় কেন আনা হয়?  



তথ্য সংগ্রহ আর তথ্য চুরির পার্থক্যটা আমাদের বুঝতে হবে। তথ্য চুরি করা একটি অপরাধ। আমাদের মনে রাখতে হবে, তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি পৃথিবীর সকল দেশেই সংবিধান এবং আইনের আওতাধীন। সংবিধান এবং আইন মেনেই সকল দেশে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। পৃথিবীর কোথাও রাষ্ট্রীয় বা সরকারি তথ্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় না।  এটি সবসময়ই নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়। আমাদের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গণমাধ্যমকেও কিছু বিধিনিষেধ মেনে নিয়ে কাজ করতে হয়। একটি বিষয় আমরা অনেকেই খেয়াল করি না, আমাদের সংবিধানসহ পৃথিবীর সকল দেশের সংবিধানে গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি সংবিধানের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য (বেসিক ফিচার অব দ্য কনস্টিটিউশন)। কারণ সংবিধান অনুযায়ী (সংবিধানের তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী), মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সকল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী দুইটি শপথ পাঠ করেন। একটি সাধারণ শপথ অর্থাৎ আনুগত্য ও সংবিধান রক্ষার শপথ এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে গোপনীয়তার শপথ। অর্থাৎ রাষ্ট্রের কার্যাবলীর গোপনীয়তা রক্ষা করা একটি সাংবিধানিক অঙ্গীকার এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে সকল বিষয় আসে, সেগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর থেকে আসে। এই সকল মন্ত্রণালয় ও দফতরের নথিগুলোতে এই সকল তথ্য থাকে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য সকল মন্ত্রীগণ সংবিধান অনুযায়ী শপথ নিচ্ছে, তাদের সামনে উপস্থাপিত সকল বিষয়ের গোপনীয়তা তাঁরা রক্ষা করবেন, সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর থেকে সেই তথ্যগুলো যখন কেউ প্রকাশ করে দেয় কিংবা কেউ যখন এই তথ্য চুরি করে, এটি শুধু চুরিই নয়, এটি সংবিধানেরও লঙ্ঘন। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় বা সরকারি তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। সাংবাদিকসহ যেকোনো ব্যক্তি তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করবেন। তথ্য পেতে কোন প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হলে তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়েরের ব্যবস্থা আছে। তবে একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, সংবিধানে গোপনীয়তা রক্ষার যে বিষয়টি রয়েছে, সেটি অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই। সেটি মেনেই আমাদের তথ্য অধিকারের বিষয়টি দেখতে হবে। 

মনে রাখতে হবে যে, রাষ্ট্রীয় অনেক তথ্যই মূল্যবান এবং এগুলোর সাথে রাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত থাকে। অনেক তথ্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সম্পর্কিত, অনেক আর্থিক ও অর্থনৈতিক তথ্য থাকে যেখানে জাতীয় স্বার্থ জড়িত। বাজেটের বিভিন্ন তথ্য, স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য, টেন্ডার সম্পর্কিত, জ্বালানি তেলের মূল্য, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নানা তথ্য এবং রাষ্ট্রীয় আরও অনেক তথ্য থাকে যেগুলোর বিষয়ে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওই তথ্যগুলো প্রকাশিত হলে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণœ হতে পারে। এই কারণে পৃথিবীর সকল দেশেই রাষ্ট্রীয় নতিগুলোকে ক্লাসিফাইড ডকুমেন্ট হিসেবে দেখা হয়। আমাদের দেশের সচিবালয়সহ সরকারি দফতরগুলোতে সাংবাদিকগণ যেভাবে অবাধে তথ্য সংগ্রহ করেন, পৃথিবীর আর কোন দেশে সাংবাদিকগণ এতোটা স্বাধীনতা ভোগ করেন না। তথ্য সংগ্রহের জন্য তথ্য চুরি করা শুধু অপরাধই নয়, এটি সংবিধানেরও লঙ্ঘন। সরকারি দফতরের কোন কর্মকর্তার নথি থেকে গোপনে কাগজপত্র সরিয়ে নেওয়া কিংবা গোপনে ছবি তুলে নেওয়া তথ্য চুরির মধ্যে পড়ে। এই ধরনের অনৈতিক ও বেআইনি কাজ সাংবাদিকতার নীতি বিরোধী। সাংবাদিক অবশ্যই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করবেন। তার জন্য তথ্য চুরি করার প্রয়োজন হয় না। একজন পরিশ্রমী সাংবাদিক চাইলে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন, পলিসি, রেগুলেটরি আদেশ, মন্ত্রী পরিষদ ও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ইত্যাদি সম্পর্কে নিয়মিত স্টাডি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দফতরের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষণ করলে অনেক তথ্যই সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া, সাংবাদিকগণ মন্ত্রণালয় সমূহের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং এ অংশ নেন। সেখানে তাঁরা মন্ত্রী সচিবকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে পারেন। তারপরও কোন সাংবাদিক সন্তুষ্ট না হলে তিনি মন্ত্রী, সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে তাঁর সাথে খোলামেলা আলাপ করে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করতে পারেন। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে একজন সাংবাদিক ওই মন্ত্রণালয়ে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে বুঝতে পারবেন এবং তিনি এই অনিয়মের কথা লিখতে পারবেন। আমাদের দেশের অধিকাংশ সাংবাধিকই এই ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করেন এবং তাঁরা সত্যিকার অর্থে মেধাবী ও পরিশ্রমী সাংবাদিক। কিন্তু সরকারি দফতর থেকে তথ্য চুরির বিষয়টি একদিকে যেমন একটি অপরাধ, অন্যদিকে এই প্রবণতার কারণে সরকারী দফতর গুলোর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী তথ্য চুরির বিষয়টির সাথে যুক্ত হয়ে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে দেশের অনেক ক্ষতি করতে পারে। দেশি-বিদেশি কিছু ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটও  তথ্য চুরির সাথে সংশ্লিষ্ট এই গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে নানা অবৈধ স্বার্থ হাসিল করতে পারে। 

তাই তথ্য চুরির বিষয়টিকে হাল্কা ভাবে দেখা ঠিক হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা কেওই আইনের ঊর্ধ্বে নই।  কেউ অপরাধ করলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। অপরাধীকে শাস্তি পেতে হবে। আবার, কেউ যাতে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত না হয় সেটিও সবাইকে দেখতে হবে। সাংবাদিক রোজিনার বিষয়টি নিয়ে দেশে বিদেশে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, আমার কাছে মনে হয় এটি একটি নতুন ষড়যন্ত্র। যারা সরকারের এক যুগ ধরে নিরবিচ্ছিন্ন সাফল্য আর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারছে না, তারাই মূলত এই ষড়যন্ত্রের কলকাঠি নাড়ছে। এই বিষয়ে আমাদের সবাইকে একটু সতর্ক থাকতে হবে।

লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; প্রথম আইন বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]