শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোনাম: বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর    রায়পুরের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে পুনরায় উপজেলা চেয়ারম্যান হতে চান অধ্যক্ষ মামুন    বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন    দেশে দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রেকর্ড , আরও কতদিন থাকবে জানালো অধিদপ্তর    প্রশ্ন ফাঁস চক্র, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫    কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে ৪২২ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার এয়ারবাস     ঢাকায় ভিসা সেন্টার চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ব্রাজিলের: রাষ্ট্রদূত   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
মামুনুলের হাত ছাড়া হচ্ছে রাহমানিয়া মাদ্রাসা
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১১:৫৮ এএম | অনলাইন সংস্করণ

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক মোহাম্মদপুরের জামি'আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা ঘিরে প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে একটি দুষ্টচক্র গড়ে তুলেছেন । মামুনুলের বাবা মাওলানা আজিজুল হক ওই প্রতিষ্ঠানটিতে রাজনীতি ঢোকান । তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শরিক ছিলেন। বর্তমানে আজিজুলের চার ছেলে, নাতিসহ অন্তত ২০ আত্মীয় প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা করছেন। এটা যেন তাদের 'পারিবারিক সম্পত্তি'।

এই মাদ্রাসায় রাজনীতির বীজ বপনের বিরোধিতা করায় ৩৫ জন শিক্ষককে একযোগে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হয়। পুরোনো পাঁচজন শিক্ষক আর মামুনুলদের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়ে চলছে এই প্রতিষ্ঠান। তবে মাদ্রাসা থেকে বিতাড়িতরা অনেক আগেই আদালতের শরণাপন্ন হন। গত বছর আদালত থেকে তাদের পক্ষে রায়ও হয়।

জেলা প্রশাসন ও আদালত থেকে তিন দফায় রায় বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মামুনুল গ্রেপ্তারের পর আবার নড়েচড়ে বসেছেন বিতাড়িত সেই শিক্ষকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার তারা মাদ্রাসায় নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বরাবর লিখিত আবেদন করেন। সেখানে তারা আদালতের রায়ের অনুলিপি সংযুক্ত করে দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসার বিষয়ে আদালতের রায়ের ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। এরপর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামুনুল ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের মাধ্যমে কেউ হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হলে তা নির্ভয়ে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করেন কমিশনার।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, মাদ্রাসাটি দখল করে রেখেছিলেন মামুনুল ও তাদের পরিবারের লোকজন। যারা এই চক্রের মাধ্যমে বঞ্চনার শিকার, তাদের পক্ষ থেকে একটি আবেদন পেয়েছি। আদালতের নির্দেশনার আলোকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এর নিয়ন্ত্রণ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। উগ্রবাদী কায়দায় সেখানে যারা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল, তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে। মামুনুল ও তার লোকজন মাদ্রাসা দখলের ঘটনায় জড়িত হলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

জামি'আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার অন্তত সাতজন সাবেক শিক্ষকের সঙ্গে গতকাল কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুফতি হিফজুর রহমান। তিনি একসময় মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০০১ সালে তাকেসহ ৩৬ শিক্ষককে একযোগে প্রতিষ্ঠানটি থেকে অন্যায়ভাবে বের করে দেওয়া হয়। হিফজুর সমকালকে জানান, ১৯৮৬ সালে এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ১০ জন। তাদের মধ্যে সিনিয়র ছিলেন শায়খুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক। তাই শুরুতে তাকে ঘিরেই এ মাদ্রাসা পরিচালিত হতো। ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির ওপর এটি গড়ে ওঠে। হাজি মোহাম্মদ আলী ও নূর হোসেন এ সম্পত্তির মালিক ছিলেন। মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে তাদেরও নাম রয়েছে।
কেন একসঙ্গে এতজন শিক্ষককে বের করে দেওয়া হয়- জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এর আদর্শ ছিল- এখানে কোনো রাজনীতি করা যাবে না। তবে মামুনুল হকের বাবা প্রথম এ প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি ঢোকান। শিক্ষকদের দু-চারজন বাদে প্রায় সবাই এর বিরোধিতা করেন। মিছিল-সমাবেশে মাদ্রাসা থেকে ছাত্রদের ডেকে নেওয়া হতো। বিভিন্ন সময় রাজনীতিতে জড়াতে গিয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা গ্রেপ্তারও হয়। মাদ্রাসা ঘিরে রাজনীতি করার বিরোধিতা করতে গিয়েও একসঙ্গে এতসংখ্যক শিক্ষককে বের করে দেওয়া হয়। মাদ্রাসায় ছাত্র মজলিস করার কারণে আজিজুল হকের ছেলে মামুনুল হককে ছাত্রাবস্থায় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বহিস্কারও করা হয়।

হিফজুর রহমান আরও বলেন, পরবর্তী সময়ে মাদ্রাসাটিকে একটি পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে রূপ দেন মামুনুল হক ও তার স্বজনরা। তারাই এটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। আদালত ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন দফায় মামুনুল হকসহ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামুনুলের আর ৪ ভাই ও ৮ বোন আছেন। এর মধ্যে মামুনুলসহ চার ভাই এ মাদ্রাসার শিক্ষক। অন্যরা হলেন- মাহফুজুল হক, মাহমুদুল হক ও মাহবুবুল হক। তাদের একাধিক ভাগিনা ও ভাতিজা সেই মাদ্রাসার শিক্ষক।

জানা গেছে, ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে মাদ্রাসাটির তৎকালীন অধ্যক্ষসহ পরিচালনা কমিটির অন্যদের উচ্ছেদ করা হয়। ওই উচ্ছেদে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত-শিবির কর্মীদের জড়ো করা হয়েছিল। তৎকালীন প্রশাসনও এতে সহায়তা করে।

জানা গেছে, মামুনুল ও তার লোকজন মাদ্রাসায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর আশপাশের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেন। মাদ্রাসা ভবনের উত্তরদিকে চাঁন মিয়া হাউজিং। ওই অংশের ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রশস্ত খালি জায়গা দীর্ঘ দিন মাদ্রাসা প্রাচীরের মধ্যে খালি পড়ে ছিল। কিন্তু সেটা মাদ্রাসার সম্পদ নয়। সম্প্রতি মাদ্রাসার মূল অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে খালি জায়গাটিতে স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। চাঁন মিয়া হাউজিং কর্তৃপক্ষ জানায়, খালি ওই জয়গাটি খাসজমি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের ওই খাসজমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের বিরোধিতা করেন তারা।

মামুনুল ওই মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর যারা প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- মুফতি হিফজুর রহমান, মুফতি মনসুরুল হক, ইব্রাহিম হেলাল, সাইদ, মিজানুর রহমান, রুহুল আমিন, ইদ্রিস, ফারুক, আবদুল কাইয়ুম, ওবায়দুল্লাহ, রেজওয়ানুর, আবদুর রাজ্জাক, হিলাল উদ্দিন, বোরহান উদ্দিন, মনিরুজ্জামান, আহমদ উল্লাহ, হাসান সিদ্দিকুর, ওমর ফারুক, আবদুর রহিম, হেলাল উদ্দিন, রুহুল আমিন, কামরুজ্জামান প্রমূখ।



মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, মাওলানা আজিজুল হক রাজনীতি করতে গিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনেন। ২০০০ সালে মোহাম্মদপুরে নূর মসজিদের পাশে হরতালের দিন একজন পুলিশ হত্যার শিকার হন। ওই দিন মাদ্রাসা ছাত্রদের রাস্তায় জড়ো করেছিলেন আজিজুল হক ও তার লোকজন। তবে সব পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে যায় ২০০১ সালের নির্বাচনের পর। হঠাৎ শত শত লোক লাঠিসোটা ও অস্ত্র নিয়ে মাদ্রাসা দখল করে। এর পর আর আমরা সেখানে ঢুকতে পারিনি।

মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক জানান, আদালত থেকে তাদের পক্ষে রায় দেওয়া হলেও এতকাল সরকারপন্থি স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গ্রুপের কারণে তারা মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি। বারবার তাদের হস্তক্ষেপে প্রশাসন পিছু হটে। এটা না হলে অনেক আগেই অবৈধ দখলদারদের সেখান থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব ছিল।

মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ :মামুনুলকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এরই মধ্যে সংগঠনটির মোট ১৭ শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামুনুলকে তাদের অনেকের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে নানা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। আবার কিছু প্রশ্নের জবাব তার মতো করে দিচ্ছেন।

ভোরের পাতা/পি

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


আরও সংবাদ   বিষয়:  মামুনুল   হাত ছাড়া    রাহমানিয়া মাদ্রাসা  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]