গতকাল ১২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাকিম চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১২ ফুট উচ্চতার একটি ভাস্কর্য স্থাপন করতে গিয়ে ঢাবি উপাচার্যের তীব্র বাধার মুখে পড়ি আমরা।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কর্মীদের সংগঠন অপরাজেয় বাংলা এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উদ্যোগে গতকাল এই ভাস্কর্য স্থাপন করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন আওয়ামী লীগ সরকার ও বঙ্গবন্ধুর বিরোধী কোনো শক্তি।
এর পূর্বে ডিসেম্বর মাসে আমরা ঢাবি উপাচার্য আখতারুজ্জামানের সাথে তার বাসভবনে দেখা করে তাকে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থাপনের অনুরোধ জানাই। তাকে আমরা এই আল্টিমেটামও দিয়ে আসি যে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর পূর্বে যদি ঢাবি কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুর কোন ভাস্কর্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন না করে এবং আমাদেরকেও ভাস্কর্য স্থাপনের অনুমতি না দেয় তবে আমরা অনুমতি ছাড়াই আমাদের পছন্দমত জায়গায় নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ঢাবিতে স্থাপন করবো।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, ঢাবি উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ মার্চের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর কোন ভাস্কর্য স্থাপন করেননি এবং আমাদেরও তা করতে নিরুৎসাহিত করতে চেষ্টা করেছেন। আমার প্রশ্ন আসতেই পারে, যে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ এর কারণে আজ আপনার মতো একজন লোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন, সেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের প্রতি আপনার এতো অশ্রদ্ধা কেন?
আপনারা সবাই তো দেখছি খন্দকার মোশতাকের মতোই দুই রূপ ধারণ করে বসে আছেন। জিয়ার আমলের ভিসি, জিয়ার খাস দালাল ফজলুল হালিম এর মেয়ে সাদেকা হালিম যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন, এবং ভিসি তাকে ভয় পান, সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ঢাবি প্রশাসনের অন্তরে শ্রদ্ধা থাকবে না এটাই তো স্বাভাবিক এবং গতকাল তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।
ভাবতে পারা যায়, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অথচ আমরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে ভিসির পাঠানো পুলিশের সাথে ঝগড়া বিবাদ ও চিৎকার করছি? এই যদি দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনের অবস্থা হয় তবে হেফাজত এই দেশে তাণ্ডব চালাবে এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে বার বার হামলার সাহস পাবে এই তো বাস্তবতা।
গতকাল উপাচার্য অনেকগুলো অন্যায় করেছেন এবং তার মধ্যে অন্যতম অন্যায় হলো, বর্তমানে ঢাবিতে অধ্যয়নরত ছাত্রদের মোকাবিলা করতে তিনি তার প্রশাসনের লোকজন না পাঠিয়ে সরাসরি পুলিশ পাঠিয়েছেন। এটা অত্যন্ত লজ্জার এবং ছাত্রদের জন্য অপমানের। তিনি পুলিশকে মারমুখী আচরণে বাধ্য করে আমাদের মতো ছাত্রলীগের সাবেক এবং বর্তমান কর্মীদের হেনস্থা করেছেন। এজন্য তার অপসারণ দাবি করছি।
সমাজের অসুর যেমন আছে তেমনি দেবশিশুও আছে। গতকাল শত লাঞ্ছনার মাঝেও একটি দৃশ্য আমার মনকে শান্তি দিয়েছে এবং সকল অপমান হজমে সাহায্য করেছে।
যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি মাটিতে দাঁড়িয়েছিলো এবং মূল বেদী নির্মাণের কাজটি উপাচার্যের পাঠানো পুলিশ বাহিনী বন্ধ করতে আমাদের সাথে বিতণ্ডায় লিপ্ত ছিলো, সেই সময়ে ৮-১০ বছরের একটি শিশু মাটিতে দাঁড়ানো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের প্রতি গভীর ভালোবাসা নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়েছিলো এবং অল্প পরেই আশে পাশের একটি গাছ থেকে কিছু ফুল এনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পায়ে রেখে দিলো। আমার চোখ তখন জলে ভরে গেলো, মনে হলো সকল শ্রম ও অর্থ ব্যয় আমাদের সার্থক হলো।
হিসেব নিকেশ ও ব্যক্তি লোভ ও লাভ করতে জানা শিক্ষিত উপাচার্য মানুষ নাও হতে পারে, তার অন্তরে বেঈমানি থাকতে পারে, কিন্তু একজন নিষ্পাপ শিশুর বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাকে তীব্র ভালোবেসে তার ভাস্কর্যের প্রতি যে নিখাদ শ্রদ্ধা গতকাল আমি নিজে দেখেছি, নাম না জানা সেই শিশুটির প্রতি আমার হৃদয়ের গভীর হতে শুভ কামনা রইলো।
এই কোমল হৃদয়গুলোতেই বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন শত সহস্র বছর।
লেখক ও সমাজকর্মী, সদস্য সচিব, অপরাজেয় বাংলা