শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোনাম: দেশব্যাপী ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি    কেনিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, সেনাপ্রধানসহ নিহত ১০    বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী    ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের    ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে    ইরানে পাল্টা হামলা করল ইসরায়েল    ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
গোপনে এক আত্মীয়কে বিয়ে করেছেন ‘শিশু বক্তা’
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১, ১১:২১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের মতো ‘শিশু বক্তা’ও বিয়ে নিয়ে দিয়েছেন অস্পষ্ট তথ্য। ২০১৯ সালের শেষের দিকে এক আত্মীয়কে তিনি বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু গোপন ওই বিয়ে সম্পর্কে জানে না পরিবার ও এলাকাবাসী।

বুধবার (৭ এপ্রিল) ভোরে রফিকুল ইসলামকে আটক করে র‍্যাব। এরপর বিকেলেই গাজীপুরের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।

র‌্যাব বলছে, হেফাজতের সঙ্গে তার সখ্যতা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে কটূক্তির বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মামুনুল হকের মতো এ শিশুবক্তারও বৈবাহিক জীবন অস্পষ্ট। তিনি ২০১৯ সালের শেষের দিকে নিজের ভাবির এক চাচাতো বোনকে (নাম আসমা বেগম) দুইপক্ষের পরিবারের অজান্তে বিয়ে করেছেন। সে বিয়ের কাবিন বা সাক্ষী সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য দিতে পারেননি রফিকুল ইসলাম মাদানী।’

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞাসাবাদকালে তার মোবাইলফোনে বেশকিছু আপত্তিকর ভিডিও পেয়েছি। এছাড়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের শীর্ষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে কুৎসা, কটূক্তিমূলক, বক্তব্য ভিডিও ও ফেসবুক কনটেন্ট পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে আরো মামলা হবে।’

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার তিনি ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের ফুলপুরের রহিমগঞ্জে কনে দেখতে গিয়েছিলেন রফিকুল। কনের নাম আসমা আক্তার। তবে পাত্রীর বাবা-মা’র পছন্দ হয়নি রফিকুলকে। তবে পিলে চমকে উঠা তথ্য হলো, মাওলানা রফিকুল গত ২০১৯ সালের শেষের দিকে হালুয়াঘাটের সেই পাত্রী আসমা আক্তারকেই গোপনে বিয়ে করে ফেলেছেন। আসমা আক্তার তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী পারভীন আক্তারের চাচাতো বোন। ওই গোপন বিয়ের অন্যতম একজন স্বাক্ষী ছিলেন পারভীন। রফিকুল এবং আসমার ওই বিয়েরও কোনো রেজিষ্ট্রি হয়নি। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের জন্য আসমাকে দেখতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার পর ফেসবুক মেসেঞ্জারে আসমাকে তিনি লিখেছেন, ‘প্রয়োজনে ১০ বছর অপেক্ষা করবেন। তবুও তিনি তাকেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করবেন।’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে র‌্যাব সদরদফতরের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে র‌্যাব আইনগত পদক্ষেপ নেবে।’

রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলামকে নেত্রকোণা থেকে বুধবার সকালে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এর আগে ২৫ মার্চ রাজধানীর শাপলা চত্বরে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল থেকে এই ‘শিশু বক্তা’ কে আটক করে মতিঝিল থানা পুলিশ। তবে কয়েক ঘণ্টা পরেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সেদিন মুক্তাঙ্গনে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ করে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ। ওই বিক্ষোভে যোগ দেন রফিকুল।

কে এই ‘শিশু বক্তা’
মুখাবয়ব দেখে যে কারো কাছে শিশুই মনে হবে তাকে। আসলে মোটেও শিশু নন তিনি। যদিও ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে তিনি বিভিন্ন মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন। নানা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন; নানা মীমাংসিত বিষয়কেও এমনভাবে উপস্থাপন করছেন যে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সমাজে। ধর্মীয় গোঁড়ামি আর কুযুক্তি দিয়ে মানুষের ধর্মান্ধতাকে উস্কে দিচ্ছেন তিনি। তার এসব বক্তব্য বিতর্ক সৃষ্টির হীন উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। 'শিশু বক্তা' হিসেবে হঠাৎ পরিচিত হয়ে ওঠা এই ব্যক্তির প্রকৃত নাম রফিকুল ইসলাম মাদানী। নামের সঙ্গে ‘শিশু বক্তা’ বিশেষণ যুক্ত করার ব্যাপারে তার অবশ্য আপত্তি রয়েছে। কিছুটা অস্বাভাবিক খর্বকায়, বালকসুলভ চেহারা ও কোমল কণ্ঠস্বর তার।

নিজের ভাষ্যমতে, ১৯৯৫ সালে আমার জন্ম। কে বলছে আমি শিশু? আমার বয়স ২৬ বছর। বিভিন্ন সময়ে ওয়াজে তার নামের সঙ্গে 'শিশু বক্তা' বিশেষণ ব্যবহার না করার অনুরোধও করেন তিনি। যদিও এই শব্দ-ভূষণ ব্যবহারের সুবিধা অনেকদিন থেকেই নিয়ে আসছেন তিনি।

ইউটিউবে অনেক ওয়াজই রয়েছে রফিকুল ইসলাম মাদানীর। সেখানে একটি মাহফিলের ভাষণে জঙ্গিদের হাতে নিহত লেখক অভিজিৎ রায় ও ব্লগার রাজীব হায়দারের খুনিদের 'আমাদের ভাই' বলে সম্বোধন করেছেন তিনি। এসব মামলায় জঙ্গিদের ফাঁসির রায় হয়েছে। কিন্তু সে রায় কার্যকর না করে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার ধৃষ্টতাপূর্ণ দাবি করেছেন এই ‘শিশু বক্তা’। তিনি এও বলেছেন, এরশাদ শিকদারের মতো খুনিরা ফাঁসির রায় শুনে কাঁদে। আমার মুজাহিদ ভাইয়েরা ফাঁসির রায় শুনে হাসতে হাসতে মিডিয়ার সামনে কথা বলে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম নেত্রকোনার লেটিরকান্দা গ্রামের সাহাব উদ্দিনের ছেলে। তারা পাঁচ ভাই-বোন। তাদের মধ্যে মাদানী সবার ছোট। স্থানীয় স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হলেও পরে তিনি মাদ্রাসায় ভর্তি হন ও নূরানি, হেফজ পড়েন। এরপর আট বছর কিতাবখানায় পড়েন। মাদ্রাসার ছাত্র থাকার সময় বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে ওয়াজ করতেন রফিকুল। তিনি দাওরায়ে হাদিস পড়েছেন রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসায়। একই সঙ্গে তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অঙ্গসংগঠন যুব জমিয়তের নেত্রকোনা জেলার সহসভাপতি। নেত্রকোনার পশ্চিম বিলাশপুর সাওতুল হেরা মাদ্রাসার পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন 'শিশু বক্তা'।

রফিকুলের নামের শেষে মাদানী শব্দ যুক্ত করা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সাধারণত সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করেন, তাদের নামের সঙ্গে 'মাদানী' যুক্ত করা হয়। অভিযোগ, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা না করেই নিজের নামের সঙ্গে 'মাদানী' শব্দ যুক্ত করেছেন তিনি। এরই মধ্যে 'মাদানী' শব্দ প্রত্যাহার করতে রফিকুলকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী। তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শরীফুল হাসান খান গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই নোটিশ পাঠান।

বিতর্কিত বক্তা হওয়ায় রফিকুল ইসলামকে ওয়াজকারী বক্তাদের সংগঠন রাবেতাতুল ওয়ায়েজিন বাংলাদেশের সদস্য করা হয়নি। বরং সংগঠনটির পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্ন সময় অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।



এক ওয়াজ মাহফিলে মিজানুর রহমান আজহারির সমালোচনা করে নিজের প্রকৃত বয়স সম্পর্কে কথা বলেন রফিকুল। তিনি বলেন, আমাকে শিশু বক্তা বানিয়ে রাখা হয়। আজহারি সাহেবেরা যদি ইসলামের প্রকৃত খেদমতকারী হয়, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নাই। আজহারি সাহেব ১৯৯২ সালে জন্ম নিয়েছেন। আর আমি ১৯৯৫ সালে জন্ম নিয়েছি। তাহলে এখনও আমাকে শিশু বক্তা বানিয়ে রাখবেন কেন? আমাদের বয়সের মাত্র তিন-চার বছরের ব্যবধান। আল্লাহতায়ালা বানাইছে। দেখতে এমন লাগে। আমার করার কিছু আছে? এ জন্য আমি শুকরিয়া আদায় করি।



ভোরের পাতা/কে 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]