শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিরোনাম: দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫    মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির    মৎস খাতে বাংলাদেশকে ১৭২ কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে জাপান     আইসিসির এলিট প্যানেলে যুক্ত হলেন আম্পায়ার সৈকত    জেনে নিন আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস    শুক্রবার নাগাদ আসতে পারে ভারতের পেঁয়াজ    বিএনপি স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায়: কাদের   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বেতারকর্মীদের কাজে ফেরাতে রেডিওতে প্রচার হয় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
বিপুল হাসান
প্রকাশ: রোববার, ৭ মার্চ, ২০২১, ৮:০২ পিএম আপডেট: ০৭.০৩.২০২১ ৮:৩৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

একাত্তরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তৈরি করে নতুন মাত্রা। এ  ভাষণই মানুষের মনে  স্বপ্নের নতুন বীজ রোপন করে। জাগরণ ও শিহরণে উদ্দীপিত মানুষ মুক্তির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে উৎসাহী হয়।  ৭ মার্চের ভাষণের পর সারাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে; আর ৮ মার্চ থেকে ৭টি সেনানিবাস বাদে বঙ্গবন্ধুর শাসন সমগ্র প্রদেশে বিস্তার লাভ করে।  ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাসভবন থেকে প্রাদেশিক সরকারের কাজ চলছিল। পূর্ব পাকিস্তান কার্যত বঙ্গবন্ধু  সরকারই নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। 

একাত্তরের ৮ মার্চ ঢাকা বেতারে ঘটেছিল একটি অভূতপূর্ব ঘটনা।  আগের দিন অর্থাৎ ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আগ মুহূর্তে হঠাৎ করে স্তব্ধ হয়ে যায় ঢাকা বেতার। গভীর রাত পর্যন্ত এই কেন্দ্র আর খোলেনি। রাতে টেলিভিশনও (ঢাকা কেন্দ্র) বন্ধ থাকে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ঢাকা বেতার থেকে সরাসরি সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা করা হয়নি।  বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ সম্প্রচার না করার খবর শুনে রেসকোর্সের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভায় আসা লোকজনের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। জনতা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ এবং মারমুখি হয়ে উঠে। একইভাবে শেষ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করায় ঢাকা বেতারের কর্মীরা শ্লোগান দিতে দিতে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসেন এবং জনতার সাথে রেসকোর্সের সমাবেশে যোগ দেন। অবশ্য পরদিন ৮ মার্চ সকালে বাঙালি জাতি ঢাকা বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণ একযোগে শুনতে পান।

এ বিষয়ে একাত্তরের ৮ মার্চ দৈনিক সংবাদ, ইত্তেফাক এবং আজাদে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্সের ভাষণ সরাসরি ঢাকা বেতার মারফত প্রচার করার দাবি উঠেছিল আগে থেকেই। সারাদেশের মানুষ যাতে আগে থেকেই শুনতে পায়, তার জন্য বেতারে কর্মরত বাঙালি কর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন এ ভাষণ তারা সরাসরি সম্প্রচার করবেন। রেডিওতে এ সংক্রান্ত ঘোষণাও দেয়া হয়। ৭ মার্চ বেলা ২টা ১০মিনিট থেকে ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বেতারে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করা হয়। এ পর্যায়ে শেষ গানটি ছিল ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ এর পরেই ঢাকা বেতার হঠাৎ করে স্তব্দ হয়ে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত এই কেন্দ্র আর খোলেনি। রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনও (ঢাকা কেন্দ্র ) বন্ধ থাকে।

এ সময় লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন সিদ্দিক সালিক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। তার লিখিত ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে এ বিষয়ে তিনি লিখেছেন, সেই চূড়ান্ত সন্ধিক্ষণ হাজির হলো। মুজিবের ভাষণ দেবার কথা ছিল ২টা ৩০ মিনিটে (স্থানীয় সময়)। রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্র মুজিবের ভাষণ নিজ উদ্যোগে সরাসরি প্রচারের ব্যবস্থা সম্পন্ন করল। রেডিওর ঘোষকরা আগে থেকেই রেসকোর্স থেকে ইস্পাত দৃঢ় লক্ষ দর্শকের নজিরবিহীন উদ্দীপনার কথা প্রচার করতে শুরু করল। এটি সহ্য হয়নি পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের। রেডিওর এই প্রচারে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দফতর সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এবং একে পাকিস্তান বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে অবহিত করে এর প্রচার বন্ধের নির্দেশ দেয়।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন  জনসংযোগ অফিসার সিদ্দিক সালিখ তার গ্রন্থে লিখেছেন, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দফতরের মুখপাত্র হিসেবে ফোন করে আমি বেতার কেন্দ্রে ওই প্রচার বন্ধ করার আদেশটি জানিয়ে দিলাম। আদেশটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোনের অপর প্রান্তের বাঙালি বন্ধুটি উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন, আমরা যদি সাড়ে সাত কোটি জনগণের কণ্ঠকে প্রচার করতে না পারি তাহলে আমরা কাজই করব না। এই কথার সাথে সাথে বেতার কেন্দ্র নীরব হয়ে গেল।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সমাবেশে যোগ দেয়া বেতার কর্মীরা কাজে ফিরে যেতে অস্বীকার করেন। গভীর রাতে এ ব্যাপারে ঢাকা বেতারের কর্মীরা সামরিক কর্তৃপক্ষের সাথে একটি বৈঠকে বসেন। তারা পরদিন (৮ মার্চ) বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণের কোন প্রকার কাটছাট ছাড়া পুনঃ প্রচারের দাবি জানান এবং দাবি পূরণ হলে তারা কাজে ফিরে যাবেন বলে ঘোষণা দেন। কর্তৃপক্ষ এই দাবি মেনে নিয়ে পরদিন ৮ মার্চ সকালেই বঙ্গবন্ধুর আগের দিনের দেয়া ভাষণটি কাটছাট ছাড়া প্রচার করে এবং সারা বাঙালি জাতি ঢাকা বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণ একযোগে শুনতে পান।



এদিকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বন্ধ থাকে সচিবালয়, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। কেবল বেতন নেওয়ার জন্য দুই ঘণ্টা খোলা রাখা হয় ব্যাংক। অসহযোগ আন্দোলন চলতেই থাকে। আগের মতোই উত্তাল জনতা মিটিং-মিছিলে প্রকম্পিত করে রাখে সারাদেশ।

একাত্তরের ৮ মার্চ থেকে দেশের সব প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানের পতাকা প্রদর্শন, জাতীয় সঙ্গীত বাজানো এবং উর্দু ছবির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়।  শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রামে একাত্মতা ঘোষণা করার পালা। রেডিও-টিভির কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে তার নির্দেশে কাজ করার অঙ্গীকারে কথা জানায়।  কারাগার কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রধান আওয়ামী লীগের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে। সিএসপি ও ইপিসিএস অফিসাররা  আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছ থেকে নির্দেশ গ্রহণের ইচ্ছার কথা জানান। 

ঢাকায় অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানি নাগরিকদের মধ্যে তৈরি হয় অস্থীরতা। তাদের মাঝে ঢাকা ত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়।

ভোরের পাতা-এনই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


আরও সংবাদ   বিষয়:  রেডিওতে প্রচার হয় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ   বিপুল হাসান  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]