নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের বসুররহাট পৌরসভার নির্বাচনের শেষ দিনের প্রচরণায় আবদুল কাদের মির্জা বলেন, আমি যদি ভোট চুরি করি আমার উপর আল্লাহর গজব পড়বে। তিনি আজ বৃহস্পতিবার বসুরহাট রুপালী চত্তরে নির্বাচনী শেষ সভায় এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মগ্রহণ করিনি। খুব কষ্টে পড়ালেখা করেছি। রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে কলেজ হোস্টেলে ছিলাম। অনেক দিন না খেয়ে উপোস ছিলাম। খোদার ঈদের দিনও উপবাস ছিলাম, জীবনে কারোর ওপর কোনো অন্যায়-অবিচার করিনি। জীবনে অনেক মামলায় জড়ানো হয়েছে, জেলও খেটেছি।
ভোটারদের উদ্দেশে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘ভোটের দিন কেউ পথে ব্যারিকেড দিলে পায়ের জুতা দিয়ে পেটাবেন। অস্ত্র ও বারুদের গন্ধ পাচ্ছি। আমি এ নির্বাচনকে অন্যায়ের প্রতিবাদ হিসেবে নিয়েছি এবং যতদিন বেঁচে থাকব অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা বলে যাব।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার ভিশন হলো এদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করা। এটি তার দ্বারা সম্ভব। কারণ শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজদের এ দেশে বিচার করেছেন। তার দ্বারা সব কিছু করা সম্ভব।
তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সমালোচনা করে বলেন, তিনি (হানিফ) বলেন, আমি দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলেছি। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনি দায়িত্ববান হলে আপনার কুষ্টিয়ায় জাতির জনকের ভাস্কর্য কীভাবে ভাঙা হয় এবং ভাঙার পর আপনি কী করেছেন?
এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘এক নেতা গোপালগঞ্জ থেকে এমপি নির্বাচিত। তিনি বলেন, আমি উন্মাদ, পাগল। তিনি যদি ভালো হতেন, তাহলে তাকে কেন মন্ত্রী থেকে বাদ দেয়া হলো? যেখানে শতকরা ৯৯ ভাগ আওয়ামী লীগ, সেখান থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়া কোনো ব্যাপার নয়।
‘অপর নেতা নজরুল ইসলাম বাবু টিভি টকশোতে গিয়ে বলেন, নির্বাচনে জেতার জন্য নাকি আমার এসব কৌশল। জামায়াত-বিএনপির ভোট পাওয়ার জন্য এগুলো বলছি। তারপর এখানে নাকি আওয়ামী লীগে কোন্দল। এখানে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। সে আমার বয়সে ছোট হবে। আমার রাজনীতির ৪৭ বছর বয়সে আমি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করিনি, আগামীতেও করব না।
নিজের জীবনের চরম শঙ্কার কথাও বলেন আবদুল কাদের মির্জা। তিনি বলেন, ‘সারাদিন মোবাইল চালু রাখি। রাতে ঘুমাতে গেলেও খোলা থাকে। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা কখন কোথায় কী করে, কার ঘরে আগুন দেয়। নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য মোবাইল চালু করলেই আমাকে প্রতিনিয়ত মোবাইলে গালমন্দ করা হয়।
তিনি বলেন, যত বাধা, ভয়ভীতি আসুক না কেন, আমি নোয়াখালী ও ফেনীর অপরাজনীতি, ভোট কারচুপি, মানুষের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলব।
আবদুল কাদের মির্জা আরও বলেন, কিছু নেতার চামচারা বলেন, অমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভাঙা হয়েছে। এটি আসলে ঠিক নয়। ২০০৮ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনে বৃহত্তর নোয়াখালীর দুটি আসন পায় আওয়ামী লীগ।
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, এমপি নিক্সন চৌধুরী, কর্নেল ফারুক খান, আহমেদ হোসেন ও মাহবুবুল আলম হানিফ আমাকে খোঁচা দেয়। খোঁচালে আমিতো বসে থাকব না। আমি সাহস করে সত্য কথা বলি। অন্যায়-অনিয়ম, অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। ভোট জালিয়াতি, ডাকাতি চরম অন্যায়।
অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করলাম আর ভোটও চুরি করলাম, এগুলো কি একই আদর্শ। এসবের কাছ থেকে এ দেশের মানুষ পরিত্রাণ চায়। এসবের প্রতিবাদের অংশ হিসেবেই আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, ফরিদপুরের এমপি নিক্সন চৌধুরী রাজপুত্র সেজেছেন। নিক্সন চৌধুরী গতরাতে আমার উদ্দেশে বলেছেন- চুনোপুঁটিদের কথা কে শোনে, শেখ হাসিনার কাছে ঘেঁষতেও পারবে না।
আবদুল কাদের মির্জা প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি কি চুনোপুঁটি? তিনি তো আমাদের ত্যাগী নেতা জাফরউল্যাহর ভোট চুরি করে এমপি হয়েছেন। আপনার বয়স কত? আমার রাজনৈতিক বয়সও তো হবে না। গায়ের জোরে আন্ডু-গান্ডু-পান্ডুরা আপনার সঙ্গে আছে। এজন্যই আপনি ভোট চুরি করে এমপি হন।
তিনি বলেন, আমার নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে যেতে আপনার মতো রাঘববোয়ালের প্রয়োজন হবে না। আপনি তো নোয়াখালীর এমপি একরামুল করিম চৌধুরী আর ফেনীর এমপি নিজাম হাজারীদের অনুসারী।
তিনি আরও বলেন, আমি বাংলাদেশে প্রমাণ করতে চাই- গণতন্ত্র ও অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন কাকে বলে, গণতন্ত্র ও নির্বাচন কী জিনিস?
কাদের মির্জা বলেন, আমি শপথ করলাম, আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব। আমি এক ভোট পেলেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। সত্য কথা বললে অসুবিধা, কারও কারও গায়ে লাগে। আমি বলতে চাই, এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে। এ জন্য প্রশাসনকে আমি সব ধরনের সহযোগিতা করে যাব। কেউ কোনো ধরনের ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করবেন না।
আবদুল কাদের মির্জা অভিযোগ করেন, নির্বাচন বানচাল করতে আজ অস্ত্র পাঠানো হয়েছে কোম্পানীগঞ্জে। আমি প্রশাসনকে বলেছি অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য। অদৃশ্য কারণে আজ কিছুই হচ্ছে না। কষ্ট লাগে নোয়াখালী কে চালাচ্ছে? এটা কী রাজনীতি? অস্ত্রের ঝনঝনানি কোম্পানীগঞ্জে চলবে না, চলতে দেওয়া যাবে না। তার আশঙ্কা, ‘ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আগামী দুই দিনের ভেতর কাউকে মেরে ফেলা হতে পারে। মেরে ফেলার পর আমার ওপর, আপনাদের ওপরে দায় চাপানো হতে পারে।’
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, গত ১২ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর এখানে আসার কথা ছিল। আমি আশায় বুক বেঁধে ছিলাম, এই লোকটার কাছে মনের কথাগুলো বলব। তিনি আসলেন না। কেন আসলেন না? তবে আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিচ্ছি, আগামী পরশুর নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয়, যদি কোনো প্রার্থী বা কোনো কর্মীকে রাস্তায় বাধা দেওয়া হয়, এটার দায়িত্ব নোয়াখালীর ডিসি, এসপি ও নির্বাচন কর্মকর্তাকে নিতে হবে।
আবদুল কাদের মির্জা প্রতিদ্ধ›দ্বী প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমি আজকে হলফ করে বলছি, যদি পরশু দিনের নির্বাচনে কোনো কারচুপি হয়, যদি আমি কারচুপিতে সহযোগিতা করি, তাহলে সে দিনই যেন আমার মৃত্যু দিন হয়। আমি কোনো কারচুপির নির্বাচন করব না। কিন্তু আপনাদের বলব, আপনাদের তো স্বভাব ১২টার পর বর্জন করা। কোথাও কোনো কারচুপি হলে আমাকে জানাবেন, জনগণকে নিয়ে সেখানে ভোট বন্ধ করে দেব। প্রশাসন বন্ধ করবে না। তারা ম্যানেজ হয়ে গেছে। আমি ভোট বন্ধ করে এখানে (রুপালি চত্বর) এসে আন্দোলন শুরু করব।’
এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজস পাশা রুমেলসহ দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।