বিজয়ের চেতনায় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে বাংলাদেশ
#শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথেই হাঁটছে আমাদের স্বদেশ: ড. আতিউর রহমান।
#বঙ্গবন্ধুর সকল স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা: মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম।
#ডিজিটাল ইকোনমি অভিসন্ধির অন্যতম উদাহরণ বাংলাদেশ: সাজ্জাদ আলম খান তপু।
#বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কোন বিরোধিতা সহ্য করা হবে না: নাসির উদ্দিন আহমেদ।
বিজয়ের চেতনায় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে বাংলাদেশ
শুরু হলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এর প্রতিটি ক্ষণ যেন ধ্বংস আর সৃষ্টি ইতিহাসের একেকটি পাণ্ডুলিপি। ১৯৭১ সালে আগুনের লেলিহান শিখায় যখন গোটা পূর্ব পাকিস্তান পুড়ে পুড়ে ছাই হচ্ছে, ঠিক তখনই নতুনের কেতন উড়িয়ে বাংলাদেশ নামের একটি ভূ-খণ্ড জন্ম নিচ্ছে। বিশেষ করে ’৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রতিমুহূর্ত যেন ‘বাংলাদেশ’ সৃষ্টির কথা বলে। এতো তিক্ত স্মৃতির দেশে আর কোন তিক্ততার স্বাদ যাতে না পায় এই সোনার বাংলার মানুষেরা। বিজয়ের এই মাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৭৬ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ড. আতিউর রহমান বলেন, শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধা জানাই বাংলাদেশের আরেক নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। শ্রদ্ধা জানাই ১৫ই আগস্টের সেই কালো রাতে তার পরিবারের যেসব সদস্যরা শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন তাদের প্রতি, শ্রদ্ধা জানাই সকল মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা। একেতো মুজিব বর্ষের বিজয় দিবস এটি অন্যদিকে সামনের বছরটা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো আমরা। এইরকম দুটি মাইলস্টোন দিয়ে আমরা এবার ৪৯তম বিজয় দিবসের মাস পালন করছি। কতো আয়োজন ভেবে রেখেছিলাম এবছর এই দুটি দিবসকে নিয়ে। প্রতিবছর বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নানাবিধ কর্মসূচি পালন করি আমরা। এ বছর বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে এসব কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও জননেত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে আমরা এই সংকট ধিরে ধিরে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। নিরাপদ টীকা এসে পরলে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে আশা করছি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে দেশ আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মানুষের জীবন ও জীবিকা সচল রাখতে তিনি দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সেই পথেই হাঁটছে আমাদের প্রিয় স্বদেশ। উন্নয়নের এই রোল মডেলকে আরও শক্তিশালী করতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম বলেন, আজকে ভোরের পাতার ১৭৬ তম সংলাপ অনুষ্ঠান ও এই বিজয়ের মাসে ভোরের পাতার ফেসবুক লাইক ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে; এই দুইটি বিষয়ের জন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। জাতির জীবনে আবারও এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। কোটি মানুষের হৃদয়ে এই ডিসেম্বর আসে প্রেরণা, প্রতিজ্ঞার বার্তা নিয়ে। 'বিজয়ের চেতনায় স্বপ্ন পূরণের পথে'- এই একটি ভালো বিষয় নিয়ে আজ সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। আসলে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারতাম না একসময়। আজকে যদি জাতির পিতার জন্ম না হতো তাহলে এই স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন আমরা কোনদিনয় দেখতে পারতাম না। স্বপ্ন উনি দেখিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করেছেন এবং এই স্বপ্নের ক্যানভাসটা আরও বড় করেছেন তারই তনয়া আমাদের প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই যে স্বপ্ন, আমরা কি কোন দিন দেখেছি এই উন্নয়নের দেশকে নিয়ে। আজকে দেশে পদ্মা সেতুর মত বড় বড় মেগা প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। কিছুদিন আগেও কখন বিদ্যুৎ আসবে এইরকম একটা দোটানায় থাকতাম আমরা। আজকে কিন্তু সেটা অতীতের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের সকল উন্নয়নে কিন্তু আমাদের নেত্রীর হাত রয়েছে। আমি আজ ব্যাংকিং সেক্টরের কিছু উন্নয়নের কথা বলতে চাচ্ছি। দেখুন আগে আমাদের রিজার্ভ তেমন একটা ছিলোনা। আমরা ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে শুরু করেছিলাম আজকে সেই বাজেট কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের রিজার্ভ আজকে ৪০ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, যা সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। এবং আমরা স্বপ্ন দেখছি ৫০ বছর পূর্তিতে আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। আজকে এই করোনা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। করোনার মধ্যে আমরা পৃথিবীতে চতুর্থ মাছ উৎপাদনে শীর্ষ রাষ্ট্রে পরিণীত হয়েছি। নানা প্রতিকূলতার পরও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও বাড়ছে রেমিট্যান্স। মাথাপিছু আয় বাড়ছে। কমছে মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যু। গড় আয়ু বেড়েছে। রোধ করা সম্ভব হচ্ছে বাল্যবিয়ে। উন্নয়নের রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। প্রযুক্তিখাতে অভাবনীয় উন্নতি হচ্ছে। কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে হাইটেক পার্ক। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করেছে দেশ। উড়াল সেতু যোগাযোগের ক্ষেত্রে এনেছে নতুন মাত্রা। মেট্রোরেলের বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখলেই বোঝা যায় রেল যোগাযোগে কতটা উন্নতি হচ্ছে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে জয়ী হতে চলেছে। এসব কিছুই স্বপ্ন ছিল আমাদের জাতির পিতার যা আজ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেছেন আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা।
সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, শুরুতেই বিজয় দিবসের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। আজকে আমি আলোচনার শুরুটা অন্য জায়গা থেকে করতে চাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে যে চতুর্থ বিপ্লবের পদধ্বনি শুরু হচ্ছে তাতে বাংলাদেশ কিন্তু সম্পৃক্ত হয়েছিল। আমরা যে ডিজিটাল অর্থনীতি বা ডিজিটাল মানির যে স্বপ্ন দেখি তারও কিন্তু খানিকটা অগ্রগতি ঘটিয়েছিলেন ড. আতিউর রহমান। যে কারণে আমাদের মোবাইল মানি ট্রান্সফার বলেন, কোথায় দিব, কাকে দিব, কিভাবে দিব এবং সর্বোপরি সাধারণের মাঝে সঞ্চয়ের যে প্রবণতা সৃষ্টি করেছে। আজ আমাদের ডিজিটাল ইকোনমির যাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু একটা সময় আমরা জানতাম সাবমেরিন ক্যাবল বাংলাদেশের এই অঞ্চলে প্রবেশ করবে কি করবে না। সেটি নিয়েও একধরণের অভিসন্ধি ঘটেছিল। আজকে বাংলাদেশে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথমটি হয়েছে, দ্বিতীয়টি হয়েছে, এখন তৃতীয়টি হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হয়েছে দ্বিতীয়টিও হয়তো হবে। এবং এই সময় আমরা দেখছি প্রযুক্তির সাথে আমাদের সম্পৃক্তকরণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে প্রযুক্তির বিস্তার গঠানোর জন্য যে নীতি কাঠামো রয়েছে বিশেষত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে উত্তরণ হয়েছে। অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন, অনলাইন টেন্ডারিং, অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং, ইউটিলিটি বিল-সহ প্রায় সব সরকারি সেবার বিল অনলাইনে প্রদানের মাধ্যমে সরকারি লেনদেন অনলাইনেই পরিশোধ করা হচ্ছে। ডিজিটাল ইকোনমির যথাযথ প্রয়োগ ও প্রতিফলনের অন্যতম উদাহরণ বাংলাদেশ। আগামী দিনে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় এই ডিজিটাল ইকোনমির সর্বোকৃষ্ট উদাহরণ হবে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছেন। স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। শোষণ বৈষম্যর অবসান ঘটিয়ে প্রত্যেক মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। জাতির পিতার কাছে জনগণের থেকে প্রিয় আর কিছু ছিল না। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্থপতি মহাকালের মহাপুরুষকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা, শিশু রাসেল ও নারী সদস্যসহ পরিবার ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সকলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাংলার ইতিহাসে কলঙ্কময় অধ্যায় সৃষ্টি করে তারা হত্যার রাজনীতির অবতারণা করে। গণতন্ত্রকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে। হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়ে আইনের শাসন সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করে। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনা তাঁর পিতার স্বপ্ন সোনার বাংলা নির্মাণে এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন করেন। খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনেন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে নানামুখী প্রকল্প চালু করেন। দেশের অর্থনীতির বেশ উন্নয়ন হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়। ভারতের সাথে ফারাক্কা চুক্তি করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান আনেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেন। শান্তি চুক্তির আওতায় শান্তি বাহিনীর সদস্যরা তাদের অস্ত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে সমর্পণ করে। বিশ্বের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও আন্তরিকতায় এটা সম্ভব হয়েছিল। আজকে এই উন্নয়নের দেশে যারা দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিতে মেতে আছেন, শান্তি-সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশকে কলুষিত করতে চাচ্ছেন, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ দেশের জনকের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্রমূলক কূটচালের সাহস করতে না পারে।