বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে দিনরাত নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই করোনা মহামারীর মধ্যেও দেশকে যখন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ রেখে কোনো মানুষকে না খেয়ে মরতে হয়নি, তখন একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা আবারো করছে। সম্প্রতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য গড়তে দেয়া হবে না, এমনকি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়ে মৌলবাদের আস্ফালন দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজাকার শাইখুল হাদিস আজিজুল হকের পুত্র আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক। একাধারে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব পদে থাকা এই মানুনুল হক নিজেকে একজন ইসলামিক চিন্তাবিদ, বক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার আড়ালে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ধর্মের ভুল ব্যাখা দিয়ে বর্তমানে ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের ঠেকাতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। যদিও এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতাও রয়েছে বলে দাবি করছেন দলেরই অভ্যন্তরীণ কেউ কেউ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই মামুনুল হকের রক্তই তো রাজাকারের রক্ত। তার মধ্যে পুরোপুরি পাকিস্তানি মতাদর্শ বিদ্যমান। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে। হেফাজতকে এর আগেও মাঠে নামিয়ে কুলিয়ে উঠতে পাারেনি। কারণ বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী একটি দেশ। বাংলাদেশ কিভাবে পরিচালিত হবে এটা একাত্তরের সুমহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়েছে। ৫০ বছর পর এসে এদেশে কোনো ভাস্কর্য বা মূর্তি থাকবে না, তা নিয়ে আন্দোলন করা মানে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। পাকিস্তান আমলেও তো এদেশে ভাস্কর্য ছিল, তখন কেন মামুনুল হকের পিতা আজিজুল হক আন্দোলন করেননি? এমন প্রশ্নও রেখেছেন কেউ কেউ।
টানা ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ বিরোধী একটি শক্তি এক হয়ে এখন ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যেকোনো মূল্যে এই মৌলবাদীদের দমাতে হবে। কেননা তাদের উসকানিমূলক বক্তব্য শুনে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়। এই বিভ্রান্তির সুযোগেই তারা গুজব ছড়িয়ে নানা আন্দোলন করে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতিও সাধন করেছে। তবে এই মৌলবাদী হেফাজত কিভাবে এতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে, সে জন্য আওয়ামী লীগেরও দায় রয়েছে বলে মনে করেন অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। তারা মনে করেন, দেশ পরিচালনার সকল কাজই করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বগুণেই বাংলাদেশ এখন পুরো পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। দলীয় প্রধানের দায়িত্বও তিনি পালন করছেন সুচারুভাবে। কিন্তু তাকে না জানিয়ে অনেক অনুপ্রবেশ ঘটেছে দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি থেকে শুরু করে অনেক নেতার হাত ধরেই। এই সুযোগটা্ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতর থেকেই মৌলবাদীরা আস্ফালন দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে বলেও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যেভাবে মৌলবাদীদের দমিয়ে রাখতে পেরেছিলেন, তেমনভাবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেটি করতে পারেননি। তিনি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনার পর এসে কূটনৈতিক ভাষায়, ধর্মীয় ব্যাখা দিয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তার এই বক্তব্যে মৌলবাদকে রুখে দেয়ার মতো তেমন কোনো হুংকার ছিল না। যেমনটা দিতে পারতেন সৈয়দ আশরাফ। এই ব্যর্থতার দায়ও নিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকেই। আওয়ামী লীগের ভেতরে বাহিরে বলা হচ্ছে, এমনকি আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদককেও দলের একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য বলে দিয়েছেন, ‘নতুন নেতা হয়েছেন, চুপচাপ থাকবেন।এসব নিয়ে আপনার কথা বলার সময় এখনো আসেনি।’ দুঃখ করে আওয়ামী লীগের নতুন ধর্ম সম্পাদক এ্যাড. সিরাজুল মোস্তাফা ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার খুবই কষ্ট হয় একজন প্রগতিশীল মানুষ হয়েও যখন কথা না বলতে পারি।
তবে চট্টগ্রাম ২ আসনের সংসদ সদস্য এবং তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বর্তমান মৌলবাদীদের আস্ফালন দেখে অবাক না হয়ে ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে বলেন, এই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে আওয়ামী লীগেরই কয়েকজন লোক। যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশে পাশে থেকে ভুল ব্যাখা দিয়ে থাকেন। তারা শুধু মুখে মুখেই বঙ্গবন্ধুর কথা বলে। এমনকি তাদের নিজ পরিবারেও রাজাকার ছিল। তারাই এখন দলের সাধারণ সম্পাদক তখন নব্য রাজাকারদের পক্ষে গোপনে কাজ করবেন এটাই তো স্বাভাবিক।মাইজভান্ডারী আরো বলেন, আমাকে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আমি সেইভাবেই কাজ করেছি। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল থেকে শুরু করে হেফাজতের নানা ষড়যন্ত্র রুখে দিতে বারবার মাঠে থেকেছি। একবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বলুন, হেফাজতকে তিন ঘন্টার মধ্যে ঠান্ডা করে দিবো।
উল্লেখ্য, খেলাফত মজলিসের সাবেক আমির শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর যিনি বলেছিলেন, ইসলাম নামের বৃক্ষটির গোড়ায় পানি নয়, রক্ত ঢালতে হবে। তারপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরুর উপক্রম হয়েছিলো। ১৯৬৯ সালে তিনি চাঁদে যাবার ঘটনাকে মিথ্যা বলেছিলেন। দুই বিয়ে করে ১৩ সন্তানের বাবা। তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এসেছে বহুবার। তারই কুসন্তান হিসাবে বাংলাদেশ বিরোধী মনোভাব পোষণকারী আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার মতো কথা বলে দৃষ্টতা দেখিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রবীন্দ্র সংগীত হওয়া যাবে বলেও কথা বলেছিলেন। এই পিতাপুত্রের কোনো কথাতেই এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়নি। এবারো আওয়ামী লীগের নেতারা এখন মাঠে নেমেছেন। ইতিমধ্যেই ভোলায় নুরন্নবী চৌধুরী শাওন এবং চট্টগ্রামে ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল হুংকার দিয়েছেন মৌলবাদীদের রুখে দেয়ার। এমনকি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগও মাঠে সরব রয়েছে। যদিও সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতার সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ছাত্রলীগেও শিবিরের অনুপ্রবেশ এখনো ঘটানো হচ্ছে। তাই কেন্দ্রীয়ভাবে যতই মৌলবাদ রুখে দেয়ার হুংকার দেয়া হয়না কেন, তৃণমূলের অনুপ্রবেশকারীরা দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষে কাজ করেছে।