প্রকাশ: সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪, ৭:৩২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
সংবাদমাধ্যমের প্রচারণায় সততা, নৈতিকতা আর কর্মনিষ্ঠ কর্মকর্তাগণ কতটুকু স্থান পায়? বলছিলাম বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো: নূরুল ইসলাম স্যারের কথা। এখন পাবলিক পারসেপশন হলো, সরকারি কর্মকর্তা মানে সম্পদের পাহাড়! আর কর্মকর্তা যদি হন হিসাব ও নিরীক্ষা ক্যাডারের তাহলেতো কথাই নেই। এই কর্মকর্তার জীবন যাপনের শুধু একটা উদাহরণ দেই, উনি যখন ১নং গ্রেডে পদোন্নতি পেয়ে সচিব কোয়ার্টারে বাসা পেলেন তখন দুর্ভাবনায় পড়লেন এতো বড় বাসার পর্দা কিনবেন কী করে। তিঁনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে সেকেন্ডহ্যান্ড পর্দা বিক্রী করে এমন দোকান থেকে পর্দা কিনে লাগালেন। ২০২২-২৩ সালে যাঁরা ঢাকা থেকে পেনশনে গিয়েছেন তাঁরা এই কর্মকর্তার ব্যবহার সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। ২০২৩ সালে পেনশন পেয়েছিলেন জনাব Safiul Muznabeen স্যার এবং তখন জনাব নূরুল ইসলাম ছিলেন মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক। পেনশন প্রাপ্তি সম্পর্কে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন পেনশনার যা নীচে কপি-পেস্ট করা হলো -
শুভ অপরাহ্ণ প্রিয় সহকর্মীগণ! কর্মজীবন শেষে আজকে এক ভিন্ন এবং অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। যাকে এককথায় শিক্ষা পাওয়া বলে -- শিক্ষা বলতে সদর্থক অর্থেই এ শিক্ষা। গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ একটি ফোন পেলাম। অপর প্রান্ত থেকে ভদ্রলোক জানালেন সিজিএ (কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টস) বলছি। যথাসম্মানের সঙ্গে তাঁকে সালাম জানালাম। আপনার আনুতোষিক ও পেনশনের বিষয়টি দুই-চার দিনের মধ্যে হয়ে যাবে, আপনি অফিসে এসে নিয়ে যাবেন জানালেন। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন ও সালাম বিনিময়ে কথা শেষ। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় উপর্যপুরি ফোন আসছে অচেনা নম্বর থেকে যখন আমি অন্য একটি ফোন কলে ছিলাম। যাহোক, ফোনটি ধরামাত্রই জনৈক সামিউল ( যিনি সিএএফও অফিসের অফিসার) জানালেন আপনার আনুতোষিক ও পেনশনের কাজ কিছুক্ষণের মধ্যে শেষ হবে। আপনি কোথা থেকে চেক ও পেনশনের কাগজ সংগ্রহ করবেন। সিজিএ মহোদয়ের ফোন কলের ঠিক পরের কর্মদিবসে যে গ্রাচুইটির চেক ও পেনশনের কাগজ পাওয়া সম্ভব তা বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমি জানালাম যেহেতু সিজিএ, জনাব মোঃ নূরুল ইসলাম, মহোদয় ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে জানিয়েছেন সেহেতু তাঁর নিকট থেকেই গ্রহণ করাই শোভন হবে। সে মোতাবেক রওনা হলাম, পথিমধ্যে সামিউল সাহেবের একাধিকবার ফোন আমি কোথায় আছি, কতদূর আছি। শেষমেষ সিজিএ মহোদয়ের অফিসে গিয়ে দেখি স্বয়ং সিএএফও এবং সামিউল সাহেব আমার অপেক্ষায় আছেন। পৌঁছা মাত্রই তাঁদের সহযোগিতায় কনফারেন্স রুমে বসলাম এবং সেখানে আমার মতো অন্য লোকজনে পুরো কক্ষটি পরিপূর্ণ। মিনিট খানিকের মধ্যেই সিজিএ মহোদয় উপস্থিত হলেন এবং আমাকে তাঁর পাশেই বসালেন।
উপস্থিত অন্যান্য লোকদের সঙ্গে সিজিএ মহোদয়ের আচরণ দেখে আমি মুগ্ধ ও অভিভূত। তিনি প্রত্যেকে মা-বাবা বলে সম্বধোন করছেন এবং প্রত্যেকের কথা মনযোগ সহকারে শুনলেন। যে কাজ তৎক্ষণাত করে দেওয়া সম্ভব সে কাজগুলো তখনই করে দিচ্ছেন আর যে সমস্ত কাজে দু-এক দিন সময় লাগতে পারে সেক্ষেত্রে দিন-ক্ষণ নির্দিষ্ট করে কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনাসহ সেবা প্রত্যাশীদের নির্ধারিত দিনেই ফোন করে ডেকে আনার জন্য বল্লেন। বিস্ময়ের শেষ এখানেই নয়। উপস্থিত সকলের চা-নাস্তার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করে জানার চেষ্টা করছেন ঢাকা বা ঢাকার বাইরে থেকে কে কোন কোন জায়গা থেকে এসেছেন এবং প্রত্যেকের সুবিধাজনক জায়গায় তার অফিসের পরিবহন দিয়ে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। এসব কিছুই স্বচক্ষে দেখা এবং স্বকর্ণে শোনা। মানুষকে যে কিভাবে ভালোবাসতে হয় এবং সেবা দিতে হয় তা আজকে সিজিএ মহোদয়কে না দেখলে আমার শেখা ও জানার বাইরে থেকে যেতো।
আমার আনুতোষিকের চেক ও কাগজপত্র পাওয়ার চেয়ে বড় কথা হলো সিজিএ-এর মাপের কর্মকর্তা সারাক্ষণ সাধারণের সঙ্গে থেকে সাধারণের কথা শোনা, তার সমাধান দেওয়া আমাদের সকলের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়।তাঁর এই সেবা প্রদান ব্রত থেকে একজন পরিচ্ছন্নকর্মীও বাদ পড়লেন না তা আমার নিজের চোখেই দেখা। তিনি পরিচ্ছন্নকর্মীর সঙ্গেও হাত মেলালেন এবং তাকে কাছে টেনে নিয়ে কথা বল্লেন। সত্যিই আমাদের ভাবার আছে অনেক এবং নিজেদেরকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে সেবাব্রতে বিনির্মাণ করতে পারলে আমাদের প্রিয় দেশটি নিশ্চয়ই অন্যরকম একটি দেশ হবে।
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা সিজিএ মহোদয়কে।
(লেখাটি আনোয়ার হোসেন আনোয়ার এর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া)