শুক্রবার ৩ মে ২০২৪ ২০ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোনাম: জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত    ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করলো তুরস্ক    বজ্রপাতে চার জেলায় ১০ জনের মৃত্যু    সস্ত্রীক ওমরাহ পালনে যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল    উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবৈধ প্রভাব বিস্তার না করতে বললেন ইসি    তিন দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার    সংবাদ সম্মেলনে এসে কোমল পানীয়র বোতল সরিয়ে ফেললেন সিকান্দার রাজা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
অস্ত্র তৈরিতে পরিত্যক্ত জাহাজ!
খান শান্ত
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১:৫১ এএম | অনলাইন সংস্করণ

বঙ্গোপসাগর তীরের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গড়ে উঠেছে জাহাজভাঙা শিল্প। সেখানকার পরিত্যক্ত জাহাজ থেকে সংগ্রহ করা হয় চাহিদামতো প্রয়োজনীয় লোহা। এসব লোহা থেকে তৈরি হয় হাতল ও ট্রিগার। সাগরপাড়ে সহজেই মিলছে পাইপ, স্ক্র, স্প্রিং ও ড্রিল মেশিন। আরো পাওয়া যায় লোহা কাটার ব্লেড, তার কাটার যন্ত্র (প্লায়ার্স) ও স্ক্রু ড্রাইভার। অস্ত্র তৈরির এসব সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে স্বল্পমূল্যে। সব কাঁচামাল দিয়েই বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। বর্তমানে এপিবিএনের কর্মরত এক পুলিশ পরিদর্শক ভোরের পাতাকে বলেন, ‘অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা কাঁচামালগুলো সীতাকুণ্ডের পরিত্যক্ত জাহাজ থেকে সংগ্রহ করা হয়। দাম কম হওয়ার কারণে সেখান থেকে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয় সবচেয়ে বেশী। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভৌগোলিক কারণে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা ও কক্সবাজারের মহেশখালীতে এখনো সচল রয়েছে বেশ কিছু কারখানা। এই এলাকায় রয়েছে অর্ধশতাধিক অস্ত্র কারিগর। অস্ত্রের অর্ডার পেলেই নিজস্ব কারখানায় অস্ত্র তৈরি করেন তারা। এছাড়া অর্ডার দিলে নির্দিষ্টস্থানে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও রেখেছেন অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব অস্ত্র পরবর্তীতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। 

এ প্রসঙ্গে সীতাকুণ্ড থানার এক পরিদর্শক এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘জাহাজভাঙা শিল্পের বিষয়গুলো তদারকি করে পরিবেশ অধিদপ্তর ও শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এরপরও অপরাধ সংক্রান্ত হওয়ায় এ বিষয়ে খোঁজখবর নেব।’ এদিকে বিদেশী অস্ত্রগুলোর কিছু অংশ ফেনী ও খাগড়াছড়ির সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে চট্টগ্রামে আসছে। এর বাইরে তিন পার্বত্য জেলার সন্ত্রাসী সংগঠন ও মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকেও অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে আসছে চট্টগ্রামের অবৈধ অস্ত্রধারীরা। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী, বহনকারী এবং ব্যবহারকারীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’ চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭’র এক দায়ীত্বশীল কর্মকর্তা ভোরের পাতাকে জানান, অপরাধীদের গ্রেপ্তারসহ আইনশৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে র‌্যাব। অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে র‌্যাব।’ 

তদন্তে উঠে আসেনা অস্ত্র-গুলির উৎস: ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে হত্যার আগে নগরের নালাপাড়া এলাকায় গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়ায় সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার আসামির জবানবন্দিতে উঠে আসে আসামি জাহিদুর রহমানই সেই দিন পিস্তল উঁচিয়ে চার রাউন্ড গুলি করেছিলেন। কিন্তু ঘটনার বেশ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই পিস্তলের হদিস পায়নি পুলিশ। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে অস্ত্র, গুলিসহ নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পাঁচ সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি অস্ত্র মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তবে দুটি অভিযোগপত্রের কোনোটিতেই উদ্ধার করা এসব অস্ত্রের উৎস বা এর জোগানদাতাকে শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ বলছে, কীভাবে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে, সে বিষয়ে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো তথ্য মেলেনি। এ কারণে অস্ত্রের উৎস শনাক্ত না করেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসী নুর মোস্তফা ওরফে টিনুসহ তার সহযোগীকে আসামি করে অস্ত্র মামলায় অভিযোগপত্র দেয় র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার ১টি পিস্তল ও শর্টগান এবং ৭২ রাউন্ড গুলির উৎস তদন্তে বেরিয়ে আসেনি। র‌্যাবের দেওয়া তিন পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে মোস্তফা অত্যাধুনিক বিদেশি অস্ত্রগুলো কোথা থেকে পেয়েছেন, তার কোনো তথ্য নেই। অবৈধ পিস্তল আসছে ভারত থেকে। বাংলাদেশে অবৈধ পিস্তলের প্রায় সবই ভারত থেকে আসছে। তবে এসব পিস্তলের গায়ে কোনোসময় ভারত লেখা থাকছে না।

পিস্তলগুলোর গায়ে লেখা থাকে. মেইড ইন ইউএসএ, জার্মানি ও অনলি আর্মি সাপ্লাই ইত্যাদি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে বিদেশি পিস্তল উদ্ধার মানেই পুলিশ কর্মকর্তারা ধরে নেন সেটি ভারত থেকেই এসেছে। অবৈধ পিস্তল উদ্ধারের পর তদন্তে নেমে উৎসের এমন তথ্য পেলেও কখনো তা চার্জশীটে উল্লেখ করা হচ্ছে না।



২০১৮ সালে নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন দুই নাম্বার গেট এলাকায় পুলিশের এএসআই আব্দুল মালেকের ওপর গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া খোকনকে রিমান্ডে এনে চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের পাশের মাঠে পত্রিকায় মোড়ানো অবস্থায় পলিথিনের ভেতর থেকে পুলিশ একটি পিস্তল উদ্ধার করে। আট ইঞ্চি লম্বা পিস্তলটির বাম পাশে ইংরেজিতে ‘মেইড ইন ইউএসএ’ ডান পাশে ইংরেজিতে ‘৭ পয়েন্ট ৬৫ আরএনডি’ লেখা আছে। ব্যারেলের ওপর উল্লেখ ছিল, ‘অনলি আর্মি সাপ্লাই’। ওই পিস্তলটি পুলিশকে গুলি করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা তা জানতে সেটি এবং ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া গুলির খোসা সিআইডির কাছে পাঠায় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এরপর পরীক্ষা শেষে সিআইডির ব্যালাস্টিক বিশেষজ্ঞ আবদুর রহিম প্রতিবেদন দিয়ে জানান, উদ্ধার হওয়া পিস্তলটি দিয়েই পুলিশকে গুলি করা হয়েছিল। একই সাথে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘মেইড ইন ইউএসএ’ ও ‘অনলি আর্মি সাপ্লাই’ লেখা থাকা ওই পিস্তলটি ‘লোকাল মেইড’। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্রগ্রাম পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাংলাদেশে অবৈধভাবে পিস্তল তৈরি হয় না। এই দক্ষতা এখনো দেশের অস্ত্র কারিগররা রপ্ত করতে পারেননি। এখন যে সব পিস্তল পাওয়া যাচ্ছে সেখানে যা-ই লেখা থাকুক, সিআইডি যতই বলুক ‘লোকাল মেইড’ অর্থাৎ বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে তৈরি, অলিখিত কথা হচ্ছে সবগুলো পিস্তলই ভারত থেকে আসছে। কারণ আসামিদের তো আমরাই ধরি, তারা তো জানায় অস্ত্রগুলো কোথা থেকে আসে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকাদের কাছে এখন পিস্তলের মজুদ এতটাই বেড়েছে যে, কার কাছে পিস্তল আছে সেই তালিকা না করে কার কাছে নেই সেটা করতে হবে!’ কক্সবাজারের মহেশখালীর দুর্গম পাহাড়ে এক নলা বন্দুক, এলএমজি সহ নানা অস্ত্র বানানো হয় অনেকটা ঘোষণা দিয়ে। তবে সেখানে অত্যাধুনিক পিস্তল তৈরির কথা শোনা যায় না। এমনকি মহেশখালীর পাহাড়সহ দেশে বসে পিস্তলের গায়ে খোদাই করে কিছু লেখাও কল্পনাতীত বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। ভারতীয় পিস্তলগুলোর গায়ে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশের নাম উল্লেখ করার কয়েকটি কারণের একটি হতে পারে, প্রস্তুতকারী হিসেবে শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র রফতানিকারক দেশগুলোর নাম দেখলে বিক্রির সময় ভাল দাম পাওয়া যায়। ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যেই ওঠানামা করে ভারতীয় পিস্তলগুলোর দাম। চোরাইপথে আনা এসব ছোট অস্ত্রের লেনদেনে বেশিরভাগ সময় ব্যবহার হচ্ছে স্বর্ণ। পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ওঠে আসে, পাঁচলাইশে পুলিশকে গুলির ঘটনায় ব্যবহার করা পিস্তলটি এসেছে ভারতের ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লা সীমান্ত হয়ে। এরপর কয়েক হাত বদলের পর পিস্তলটি চট্টগ্রামে আসে। 

ভারতীয় পিস্তলের তথ্য চার্জশিটে না দেওয়া প্রসঙ্গে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যালাস্টিক বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা করে যদি বলেন, পিস্তলটি লোকাল মেইড বা স্থানীয়ভাবে তৈরি, তখন আমি চার্জশিটে কীভাবে লিখবো, পিস্তলটি ভারতীয়। তাহলে তো সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে।

ভোরের পাতা/এএ 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]