শুক্রবার ৩ মে ২০২৪ ২০ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোনাম: গাজীপুরে রেললাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক     বিএনপি এখন নিজেরাই বিভক্ত : ওবায়দুল কাদের    এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে    শনিবার ২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ    জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত    ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করলো তুরস্ক    বজ্রপাতে চার জেলায় ১০ জনের মৃত্যু   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডুবছে নৌপরিবহন অধিদপ্তর
#প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা #রেজিষ্ট্রেশন সনদ প্রদানে ঘুষ দাবি
আরিফুর রহমান
প্রকাশ: বুধবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪, ৪:০৪ এএম আপডেট: ৩১.০১.২০২৪ ৪:১৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ

ক্ষমতা থাকলে কি-না করা যায়, সেটাই এবার ঘটেছে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে। যেখানে এক জনের জাহাজ আরেকজনকে রেজিষ্ট্রেশন করে দিয়েছেন সংস্থাটির প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম। অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সদরঘাটের জাহাজ জরিপকারক ও অভ্যন্তরীণ নৌযান রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম সরকারি চাকরির বিধিমালা ভঙ্গ করে প্রতারণার মাধ্যমে জাহাজের মালিকানা দলিল, নৌযান রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, জাহাজের নাম ও মালিকানা পরিবর্তন সনদ তৈরি করে জাহাজ বিক্রি ও বিক্রয় দলিল সম্পাদনা করে দেয়। বিষয়টি সমালোচনায় আসলে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় ফৌজদারী মামলা দায়ের হয়। মামলার সঙ্গে জড়িত আরো দুইজন ব্যক্তি আছেন তারা হলেনফারজানা আমান এবং তরুণ আকন। মামলা নং ৪২ তাং ২৪/১২/২০২৩ইং। ধারা৪৬৮/৪৭১/৪২০/৪০৬/৩৪ দ: বি: আইন। খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন জাহাজের মালিক মো. শামীম হোসেন। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই (নিরস্ত্র) এইচ এম শহীদুল ইসলাম। 

শামীম হোসেন ইতোমধ্যে মামলার পাশাপাশি নৌ-পরিবহণ অধিদপ্তর, সদরঘাট ঢাকার প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক, বৈদ্যের বাজার নৌ-পুলিশ, বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং খুলনা অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ মালিক গ্রুপকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। অপরদিকে সদরঘাটের জাহাজ জরিপকারক ও অভ্যন্তরীণ নৌযান রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি নৌযানের সার্ভে রেজিষ্ট্রেশন সনদ প্রদানে ২ হাজার ২শ' টাকা ঘুস দাবীর অভিযোগ তুলে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন জাহাজ মালিক হাজী মো. শফিকুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তার মালিকানাধীন মেসার্স সায়ফা জাহাজটির নৌযান রেজিস্টেশন ও সার্ভে সনদ হারিয়ে গেলে সরকারী নিয়ম মোতাবেক থানায় সাধারণ ডাইরী করত: নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে মূল রেজিষ্ট্রেশন সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন করলে সদরঘাটের জাহাজ জরিপকারক ও অভ্যন্তরীণ নৌযান রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম তার কাছে ২ হাজার ২শ' টাকা ঘুস দাবী করেন। 

সম্প্রতি, এ বিষয়ে জাহাজ মালিক হাজী শফিকুল ইলাম নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে একখানা লিখিত অভিযোগ জমা দেন। সেই অভিযোগের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার মামলার ঘটনায় নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করলেও আজ অব্দি অভিযুক্ত আসামী জাহাজ জরিপকারক প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলামকে চাকুরী থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়নি। চাকুরী শৃঙ্খলা সরকারী চাকুরী বিধি অনুযায়ী কোন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারির বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা হলে এবং তিনি আদালত কর্তৃক জামিন গ্রহন করলেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু জরিপকারক প্রকৌশলী মো সিরাজুল ইসলামের ক্ষেত্রে এ বিধান অকার্যকর রয়েছে। ফলে তিনি আদালত কর্তৃক জামিন নিয়েও চাকুরীতে বহাল রয়েছেন। 

জানা গেছে, ২০২৩ সালের (১৮ ডিসেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাটে তরুণ আকন এবং ফারজানা আমান লোকজন নিয়ে 'এম.ভি আর কে ডি এস-১' জাহাজের মালিকানা দাবি করেন এবং এর মালামাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করেন। জাহাজে থাকা নাবিকরা বিষয়টি তখন এর মালিক শামীম হোসেনকে জানায়। পরবর্তীতে শামীম হোসেন সদর ঘাটের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক এবং অভ্যন্তরীণ নৌযান রেজিস্ট্রার, অভ্যন্তরীণ নৌযান সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করেন। সেখান থেকে তিনি জানতে পারেন তার আপন বড় ভাইয়ের ছেলে তরুণ আকন এবং রমনা এলাকার আমানউল্লাহ চৌধুরীর মেয়ে ফারজানা আমান এবং সদরঘাটের জাহাজ জরিপকারক ও অভ্যন্তরীণ নৌযান রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে মালিকানা দলিল, নৌযান রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, জাহাজের নাম ও মালিকানা পরিবর্তন সনদ এবং সার্ভে সনদ তৈরি করেছে। এসব কাজ করার জন্য তরুণ আকন তার চাচা শামীম হোসেনের নাম ব্যবহার করে এবং ভুয়া নম্বর দিয়ে অনলাইনে জিডিও করেন। 

মামলার বাদী শামীম হোসেন জানান, আমার অজান্তে ভাইপো তরুণ আকন ৮ আগস্ট আমি তার কাছে সাড়ে ৪ কোটি টাকার বিনিময়ে জাহাজ বিক্রি করেছি মর্মে নোটারি পাবলিক তৈরি করে। 'এম.ভি আর কে ডি এস-১' নামের জাহাজটি সার্ভে রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী ৫৯৩ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন। এর দৈর্ঘ্য ৫৩ দশমিক ৩৬ মিটার, প্রন্থ ১০ দশমিক ৩৭ মিটার এবং গভীরতা ৪ দশমিক ৫৮ মিটার। এরপর সদরঘাটের সার্ভে অফিসে সে আমার অনুপস্থিতিতে মালিকানা পরিবর্তন করে। এ ঘটনার পর ১০ ডিসেম্বর তরুণ আকন রমনা এলাকার ফারজানা আমানের কাছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে জাহাজটি বিক্রি করে দেয়। প্রথমত জাহাজ বিকিকিনির সময় বিক্রেতাকে স্বশরীরে উপস্থিত থাকার কথা এবং সার্ভেয়ার জাহাজটি সার্ভে করার নিয়ম থাকলেও দুইবার চারমাসের ব্যবধানে জাহাজ বিক্রি হলেও কোনো সার্ভে হয়নি। প্রথমবার আমি অসুস্থ এবং মামলার আসামি বলে আসতে না পারার অজুহাতে তরুণ সার্ভে অফিস ম্যানেজ করে মালিকানা পরিবর্তন করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তরুণ চারমাসে জাহাজটি দুইবার বিকিকিনি করেছে। কিন্তু এতে কাগজপত্রে সে জাহাজের ভিন্ন নাম দেখালেও এখনও জাহাজটি আগের নামেই আছে। এছাড়া ১৯ নভেম্বর আমার জাহাজ সব কাগজপত্র দেখিয়ে কলকা লকাতা গিয়েছিল। সেখানেও কোনো বাধা হয়নি। তিনজন মিলেই আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এ বিষয়ে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন খান বলেন, 'ঢাকার সদরঘাটের সার্ভেয়ার, এক নারী ব্যবসায়ী এবং খুলনার একজনসহ তিনজনের নামে প্রতারণা ও জালিয়াতি মামলা হয়েছে। এখনও কোনো আসামি আটক হয়নি। প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাহাজের মূল মালিকের নাম ব্যবহার করে ভিন্ন নম্বর দিয়ে অনলাইনে জিডি করা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি।' 



খুলনার একাধিক জাহাজ ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে জানান, সার্ভেয়ার অফিসের সহযোগিতা ছাড়া এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই বিষয়টি তদন্ত করা প্রয়োজন। এমন অভিনব জালিয়াতের মাধ্যমে জাহাজের মালিকানা পরিবর্তন করা রীতিমতো বিস্ময়কর। মূল প্রতারকদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সদর ঘাটের জাহাজ জরিপকারক ও নৌ- প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলামের সাথে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ভোরের পাতাকে বলেন, 'জানাজানি হলে সবঠিক হয়ে যায়। আবার কিছুদিন পর তা আবার বন্ধও হয়ে যায়। এরকম খোঁজ-খবর নিলে অনেক ঘটনা পাওয়া যাবে ভুয়া দলিল করে আছে মালিক এখনো জানেই না তিনি নিখোঁজ। এভাবেই যুগযুগ ধরে এই সংস্থাটিতে দুর্নীতি হয়ে আসতেছে। বহু সরকারি ফাইল গায়েব হয়ে যায় খোঁজ না নিলে। তা-ও আবার কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়।' 

এই বিষয়ে নৌ- পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে কথা বললে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, 'একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।'

ভোরের পাতা/এএ

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]